ইভটিজারের গলায় মবের মালা–নারীর প্রতি সহিংসতায় এমন উল্লাস কেন?

বিডি নিউজ ২৪ তামান্না ইসলাম প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৫, ১২:০৪

জামিনে ছাড়া পেয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে এক নারীকে লাথি মারা বহিষ্কৃত সেই জামায়াতকর্মী। খবরটা এরই মধ্যে পুরোনো হয়ে গেছে এবং এতদিনে নারীকে লাথি মারা সেই বীর হয়তো নিজ দলে পুনর্বাসিত হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। লাথি মারার সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায়, তাকে আটক করে সরকার প্রশংসনীয় কাজ করেছিল বলে দাবি করতেই পারে। তবে খুনখারাবির আসামি তো আর নন, তাই জামিনও পেয়েছেন দ্রুত। জামিনের ঘটনা উদযাপনের সময় তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়ার ঘটনায় যাদের দেখা গেছে; দুর্জনদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা এই ‘লাথি মারনেওয়ালা’র রাজনৈতিক সহযোদ্ধা। যদি সত্যি তারা তাই হয়ে থাকেন, তবে পুনর্বাসনের গল্পটিও মিথ্যে নয় বলে ধরে নেওয়া যায়।


এই ঘটনা নিশ্চয়ই অচেনা লাগছে না। এমন তো আরও ঘটেছে। এইতো অল্প কিছুদিন আগে ইভটিজিং করতে গিয়ে ভাইরাল হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কমর্চারীকেও একই ভাবে মব তৈরি করে ছাড়িয়ে এনে ফুলের মালা আর পাগড়ি দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়েছিল। মুন্সীগঞ্জের সেই ‘মুন্সীটি’, যে লোকটি লঞ্চে মেয়েদের পিটিয়েছিলেন জামিনের পর তাকেও ফুলের মালা দিয়ে বরণ করতে দেখলাম। মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে দুজন মেয়েকে ‘আপত্তিকর অবস্থায়’ পেয়ে এই মুন্সী সাহেব ইচ্ছামতন প্রহার করেন এবং কারণ হিসেবে বলেন, তিনি তাদের বড় ভাই হিসেবে জনসমক্ষে শাসন করেছেন। সেখানেও আমরা দেখেছি মব করতালির মাধ্যমে এই ঘটনা উদযাপন করেছে। জামিনে ছাড়া পাওয়ার যথারীতি ফুলের মালা দিয়ে তাকেও বরণ করে নেয়া হয়েছে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যে কত বড় কুশিক্ষার ইঙ্গিত হয়ে রইল সমাজের প্রতি তা ভবিষ্যৎ বলে দেবে।


একই রকমের ঘটনার ভিন্নরূপে বারবার ফিরে আসা আসলে কিসের নির্দেশ করে? শুধু আটক করে দুদিন পরে ছেড়ে দিলেই এর নিপাত সম্ভব নয়। অন্যদিকে ঘরে মা-বোন রেখে এসে একজন ইভটিজার ও মলেস্টারকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো কি নির্দেশ করে? সেই মবের অংশ প্রত্যেকটি মানুষ একই রকম পরিস্থিতিতে থাকলে তারাও একই কাজ করতেন আর সেই জন্যেই আসামিকে সাধুবাদ জানানো হচ্ছে। নারীর গায়ে লাথি দেওয়া, পিটিয়ে জখম করা, পোশাক নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা যেন সহিংসতা নয়, শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের উপায়। বিচার তো দূরের কথা, সামাজিক প্রতিবাদও ক্ষীণ কণ্ঠ, বরং ফুলের মালা দিয়ে বরণ করার মতো সরব সম্মতি প্রকট।



সাইবার সহিংসতা ও নারী


এ তো গেল মাঠপর্যায়ের চিত্র। অনলাইনের অবস্থা আরও ভয়াবহ। নিষিদ্ধ সংগঠনের নেত্রীদের শায়েস্তা করার উপায় হিসেবে শ্লীলতাহানির হুমকি দেওয়া থেকে শুরু করে যে কোনো ভিন্নমত পোষণকারী নারীকে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ মিমস, কমেন্টে মারধরের হুমকি ও জঘন্য ট্যাগ দেওয়া তো খুবই সাধারণ বিষয়। শুনতে আশঙ্কাজনক হলেও আমাদের তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশ এখনও ফেইসবুকমুখী। তারা রাজনীতি, অর্থনীতি আর সেইসঙ্গে মানবিক শিক্ষাও নেয় এই ফেইসবুক থেকে। তাই এসব ফেইসবুক অ্যাক্টিভিটির দিকে নজর রাখার কারণ আছে বৈকি। যখনই কেউ দেখছে, এসব কমেন্টের নেগেটিভিটি সম্পর্কে কেউ আওয়াজ তুলছে না বরং হাসাহাসি করে ভুলে যাচ্ছে, ব্যাপারটা এই ফেইসবুকমুখী তরুণদের ব্রেইনে নরমালাইজড হতে শুরু করে এবং তারই ফলাফল মাঠপর্যায়ে নারীর প্রতি প্রবঞ্চনা।


গায়ের রং যখন মব জাস্টিসের নির্ধারক


তবে হ্যাঁ, ‘সুন্দর-অসুন্দর’ ভেদে অবশ্য এই প্রবঞ্চনার হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে থাকে। যেমন, কালো চামড়ার ‘ময়লা’ চেহারার অথবা সাদা চামড়ার ‘পরিষ্কার’ চেহারার কেউ মবের আক্রোশের শিকার হলে তাদের প্রতি আচরণে ভিন্নতা দেখা যায়। এই যেমন ময়লা চেহারার শাহবাগীকে দেখে বমি পেলেও পরিষ্কার চেহারার শাহবাগীকে আবার বিয়ে করে চড়-থাপ্পড় দিয়ে ‘ফিক্স’ করার বাসনা ঠিকই জাগে। সেই মেয়েটি বিয়ে করে ‘ফিক্স’ হতে চাইছে কি না, সেই কনসেন্ট নেওয়া অবশ্য সেকেন্ডারি বিষয়! আবার কয়েকদিন আগে দেখুন না, দুজন আর্টিস্ট, মমতাজ ও নুসরাত ফারিয়া গ্রেফতার হলেও আদালত প্রাঙ্গণে ডিম কিন্তু ছোঁড়া হয়েছিল শুধু মমতাজের ওপরেই। ডিম নুসরাত ফারিয়াকেও মারতে বলছি না। শুধু জানাচ্ছি মব আবেগে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে গেলে যে আচরণ করে, সেটাই হলো সমাজের অধিকাংশ মানুষের নরমালাইজড চিন্তাভাবনা। ইংরেজরা ২০০ বছর শাসন করে ১৯৪৭ সালে চলে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের চোখে দুনিয়া দেখার অভ্যাস আমাদের রক্তে গেঁথে রেখে গেছে।


মব সাইকোলজির নেপথ্য কথা


এখন কথা হতে পারে, পকেটমার ধরা পরলে তাকে গণপিটুনি দিলে সেটাও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, তাহলে শুধু মেয়েদের নিয়েই কেন প্রতিবাদ হচ্ছে। মব গঠনের ঘটনা নারীপুরুষভেদে সবার সঙ্গে হলেও এটা নিয়ে এখন কথা বলার উপযুক্ত কারণ রয়েছে। মবে অংশগ্রহণ করা এবং এবং দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা দুটোই সমাজের ও তরুণ প্রজন্মের কাছে ভুল তত্থ্য দেয়। কেন, কিভাবে এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার উপায় নিয়ে কিছু ধারণা দেয়া যেতে পারে এখানে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও