তিন বছর বিশ্বকে মারাত্মকভাবে ভুগিয়ে ও লাখ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে করোনার সংক্রমণ বন্ধ হওয়ার পর আশা করা গিয়েছিল, প্রাণঘাতী ভাইরাসটি প্রাকৃতিকভাবে নির্মূল হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জনমনে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে, যদিও মাত্রা এখনো উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো নয়।
সংক্রমণ কমাতে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থা জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ নিয়েছে। ৬ জুন তথ্য অধিদপ্তর থেকে মাস্ক পরার অনুরোধ জানানোসংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ওই বিজ্ঞপ্তিতে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের জনসমাবেশপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। ৪ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকেও সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ঈদ ফেরত যাত্রীদের মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর সচেতনতা খুব বেশি কাজে লাগে না।
৪ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পার্শ্ববর্তী দেশে করোনাভাইরাস বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে গত মে মাস থেকেই করোনার প্রকোপ বাড়ছে। এর মধ্যে করোনার একটি নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও প্রচুর সংক্রমণে সক্ষম একটি নতুন এক ধরন ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দেশে ২৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। মে মাসে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৮৬। ৫ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজন মারা যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সংক্রমণের সংখ্যা এখনো অনেক কম হলেও আগের সপ্তাহের তুলনায় ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
করোনা প্রতিরোধের উপায় হলো মাস্ক ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও টিকা নেওয়া। যেসব ব্যক্তি ইতিপূর্বে একটি ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ৬০ বছর বয়সী, ১৮ বছরের বেশি বয়সী অল্প রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের টিকার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।
চিকিৎসাবিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায়, বিশেষ করে বয়স্ক ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের টিকা নেওয়া দরকার। গত ২২ এপ্রিল ইপিআইয়ের এক সভায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু রোগের প্রাদুর্ভাব কম থাকায় মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ কম। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৪৩ জন করোনার টিকা নিয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই বিদেশগামী যাত্রী। ইপিআইয়ের পরিচালক এ এফ এম শাহাবুদ্দিন খান জানিয়েছেন, সচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরদার করতে যে অর্থ প্রয়োজন, সেটা তাঁদের কাছে নেই।