দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন অনেকটা হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে মতান্তর তীব্র হতে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের রাজনীতিতে বিরাজমান অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে পদত্যাগ করার কথা বিবেচনা করছেন।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ জানালে তিনি তার বর্তমান দায়িত্ব থেকে সরে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তবে তিনি মন্তব্য করেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করার পর দেশে এক ধরনের যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। প্রায় সব রাজনৈতিক দলই চাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচন ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হোক।
জাপানের টোকিওতে নিক্কেই ফোরামে দেওয়া এক বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেশের জনগণের ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণ এবং তাদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। ড. ইউনূস বলেন, আগামী বছর জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছে। এমনকি তাদের প্রত্যাশামতো ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে পারেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এদিকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের কিছু বক্তব্য নিয়েও মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। অফিসার অ্যাড্রেসে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, তিনি মনে করেন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের মতান্তর শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েই নয়; আরও কয়েকটি বিষয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার মনে করছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার অন্যতম দাবি হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের হোতাদের বিচার চায় মানুষ। আর বিএনপি মনে করছে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আগে দেশকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যেতে হবে। ন্যূনতম সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যেই যাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার বলছে, সংস্কারবিহীনভাবে নির্বাচনের আয়োজন করা হলে পরিস্থিতি আগের মতোই হবে। মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়েই সংকট তৈরি হয়েছে।
সব মিলিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কালো মেঘের ঘনঘটা লক্ষ করা যাচ্ছে। কীভাবে এ সংকট নিরসন করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সৃষ্ট সংকট যদি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা না যায়, তাহলে জটিলতা শুধু বাড়তেই থাকবে। সেই সুযোগে পরাজিত শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। ড. ইউনূস বেশ দক্ষ ও জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে কোনো বাংলাদেশির চেয়ে তার পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা বেশি। কিন্তু তিনি যাদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছেন, তাদের কারও কারও ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। অধিকতর যোগ্যতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা গেলে তা আরও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারত। কোনো কোনো উপদেষ্টা সম্পর্কে বাজারে নেতিবাচক প্রচারণা রয়েছে।