 
                    
                    পদত্যাগ করবেন না প্লিজ: ড. ইউনূসের প্রতি আবেদন
দেশপ্রেমিক হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন, জাতি গঠনের সবটুকু অনুপ্রেরণা, সাধারণ বিবেচনাবোধ ও যুক্তিনির্ভর চিন্তা থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আন্তরিক ও বিনীতভাবে অনুরোধ করছি—এই ক্রান্তিলগ্নে অনুগ্রহ করে দেশের নেতৃত্বের হাল ছাড়বেন না।
ড. ইউনূসের মনে হয়তো অসংখ্য হতাশা জমে আছে। কিন্তু সরকারপ্রধান হিসেবে সব ধরনের আবেগ, বিবেচনা ও সিদ্ধান্তের ঊর্ধ্বে থাকবে তার দায়িত্ববোধ। আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি তিনি বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। সেক্ষেত্রে তার জন্য পদত্যাগ কোনো বিকল্প নয়, বরং নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়াই একমাত্র পথ। পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত দেশকে দৃঢ়, কার্যকর ও সুচিন্তিতভাবে নেতৃত্ব দেওয়াই তার একমাত্র দায়িত্ব এবং পুরো জাতি এর জন্য তার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে। তাকে অবশ্যই এক্ষেত্রে অটল থাকতে হবে এবং আমরা গণমাধ্যম হিসেবে আমাদের নৈতিকতার ভিত্তিতে তার পাশে থাকব। তবে নীতি-নৈতিকতা বিবেচনায় স্বাধীন গণমাধ্যমকে ভিন্নমত, বিকল্প ভাবনা ও বিশ্লেষণ তুলে ধরতে হয়, যেখানে অপ্রিয় সত্যও থাকবে।
ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে ড. ইউনূসের অবদানকে বিশ্ব কেবল স্বীকৃতি দেয়নি, অনুসরণও করেছে। ঋণকে তিনি কেবল 'অধিকার' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেননি, বরং প্রতিটি মানুষের মাঝে উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলতার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলেছেন। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার মূল আকাঙ্ক্ষা ও 'তিন শূন্যে'র পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন বিশ্ব দরবারে তাকে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। কিন্তু এসবের কোনোকিছুই কিংবা বিশ্বব্যাপী তার সম্মান, অগণিত পুরস্কার, সম্মানসূচক একাধিক 'ডক্টরেট' ডিগ্রি, অন্তহীন প্রশংসা কখনোই তাকে সরকার পরিচালনার জন্য প্রস্তুত করেনি।
একটি সরকার পরিচালনা অত্যন্ত কঠিন কাজ। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে তা আরও কঠিন। উপরন্তু যখন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর শাসনব্যবস্থার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান—সংসদ, বিচারব্যবস্থা, পুলিশ, আমলাতন্ত্র, গোয়েন্দা সংস্থা ইত্যাদি—ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, সেই পরিস্থিতিতে সরকার চালানো প্রায় অসম্ভব।
ঠিক এমন এক মুহূর্তে অধ্যাপক ইউনূস আমাদের শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সাড়া দেন, যা প্রকৃতপক্ষে ছিল পুরো জাতিরই আহ্বান। তার আগমন ছিল অভূতপূর্ব, কারণ তখন দেশের মানুষ এক অন্ধকার গহ্বর থেকে মুক্তির দিশা খুঁজছিল।
শিক্ষার্থীরা মুক্তির সেই পথ তৈরি করেছে, রাজনৈতিক কর্মীরা সেই পথে আলো ধরেছে, সাধারণ মানুষ হাতে হাত মিলিয়ে সামনে এগিয়ে এসেছে এবং জীবনও দিয়েছে। আর এসবের পরেই আমরা নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। ঠিক সেই মুহূর্তেই অধ্যাপক ইউনূস আমাদের আশার প্রতীক হয়ে ওঠেন। তার আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় তিনি আমাদের রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন।
কিন্তু এই কঠিন দায়িত্ব গ্রহণের সময়ই তার প্রয়োজন ছিল কিছু 'শর্ত' ঠিক করে নেওয়া। শুরুতেই তার বলে নেওয়া উচিত ছিল যে, তিনি 'নতুন প্রজন্মের' জন্য কাজ করবেন, কিন্তু তারা যেহেতু এখনো সব বিষয়ে পারদর্শী বা অভিজ্ঞ নন, তাই তাদেরকে তার (ড. ইউনূস) কথা শুনতে হবে। যদি তারা কথা না শোনে, তাহলে যাতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এই ধরনের একটা শর্ত দিয়ে তার ক্ষমতা নেওয়া উচিত ছিল।
যখন তিনি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে রাজনীতির ঘোলাটে পরিবেশে পা রাখলেন, তখন তিনি বাস্তব জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন এবং যাদের তিনি 'নিয়োগকর্তা' হিসেবে অভিহিত করেন, তাদের দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত হয়ে পড়লেন। ইউনূস সরকারের কার্যক্রম নিয়ে চূড়ান্তভাবে কোনো মন্তব্য করার সঠিক সময় এখনো না এলেও এটুকু বলা যায় যে, 'অন্তর্বর্তীকালীন' সরকার মানেই যেহেতু অস্থায়ী সরকার, তার জন্য ১০ মাস মোটেই কম সময় নয়। এই কাজের জন্য তিনি অনভিজ্ঞদের নিয়ে (যদিও সবাই নয়) একটি টিম গঠন করেছেন। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে তিনি দক্ষতার সঙ্গে সেই টিম পরিচালনা করতে পারেননি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তার কয়েকজন উপদেষ্টা ক্ষমতার প্রতি এতটাই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন যে, তারা তাদের মূল দায়িত্ব পালনের চেয়ে সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর দিকেই মনোযোগী হয়ে পড়েন।
 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                -68f7ebaa39de2-6903ee942e8e5.jpg)