অভ্যুত্থান শহর থেকে কেন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল না

প্রথম আলো নাহিদ হাসান প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২৫, ২২:১১

প্যারি কমিউন ব্যর্থ হয়েছিল। ১৮৭১ সালের ১৮ মার্চ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত। স্থায়ী ছিল মোট ৭২ দিন। ছিল প্যারিসের শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ প্রথমবারের মতো একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার চেষ্টা। এটি ছিল শ্রমিকশ্রেণির প্রথম রাষ্ট্র। কারণ হিসেবে জার্মান দার্শনিক ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস লিখেছেন, বিপ্লবকে শহরের শ্রমিকদের মিত্র গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে বিস্তৃত করতে না পারা। ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা মাহফুজ আলমও তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, অভ্যুত্থান শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত হয়নি।


প্যারি কমিউন যেসব কারণে ব্যর্থ হয়েছিল, সেগুলো হচ্ছে:


১. কমিউন ছিল মূলত শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের নেতৃত্বাধীন, যাঁদের অনেকেই প্রশাসনিক ও সামরিক নেতৃত্বে অনভিজ্ঞ ছিলেন। বিপ্লবীদের একটি অংশ ছিল উদারপন্থী, আরেকটি ছিল রেডিক্যাল (যেমন ব্লাঙ্কিপন্থী ও প্রুধোঁপন্থী), ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়।


২. বিপ্লবীদের যতটা কঠোর হওয়ার দরকার ছিল, তাঁরা ততটা ছিলেন না। উল্টো ফ্রান্সের তৎকালীন থিয়ারের নেতৃত্বে ক্ষমতাচ্যুত সরকার ভেরসাইয়ে অবস্থান নিয়ে সেনাবাহিনী পুনর্গঠন করে।


এই বাহিনী পরবর্তী সময় প্যারিস আক্রমণ করে এবং ‘রক্তাক্ত সপ্তাহ’–এ ৩০ হাজার কমিউনারকে হত্যা করে।


৩. গোটা ইউরোপ কমিউনারদের বিপক্ষে সশস্ত্রভাবেই দাঁড়ায়।


৪. শুরু থেকেই প্যারিসকে অবরুদ্ধ করে। শহরের শ্রমিকদের সঙ্গে গ্রামের কৃষকদের মৈত্রী গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ভেরসাই বাহিনী ও প্রুশিয়ানদের দ্বারা ঘেরাওয়ের কারণে ফ্রান্সের কৃষকেরা পাশে দাঁড়াতে পারেননি।


এ ছাড়া কমিউন ছিল পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অভিজ্ঞতা। সমাজ তখনো পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না। দার্শনিক কার্ল মার্ক্সের ভাষায়, অপরিণত প্রলেতারীয় বিপ্লব। ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস ও কার্ল মাক্স প্যারি কমিউনের ব্যর্থতার মূলত দুটি কারণ লিখেছেন, একটি শহরের শ্রমিকদের সঙ্গে গ্রামের কৃষকদের মৈত্রী গড়ে তুলতে না পারা এবং বিপ্লবীদের আরও কঠোর হতে না পারা।



আবার লেনিনদের বলশেভিক পার্টি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সফল বিপ্লবের পর শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত করতে পেরেছিলেন। অথচ ১২টি দেশের সহযোগিতায় বড় কৃষকেরা বিপ্লবকে সশস্ত্রভাবে প্রতিরোধ করেছিলেন। তবু পেরেছিলেন। কেন?


কিন্তু চব্বিশের ছাত্র গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় প্যারি কমিউন ও অক্টোবর বিপ্লবের মতো প্রচণ্ড একটি বিরোধী শর্তও নেই। সামরিক বাহিনী বিপক্ষে নেই, আন্তর্জাতিক সমর্থন কম নেই, শহরের সঙ্গে সঙ্গে মফস্‌সলে ও গ্রামেও অভ্যুত্থানের পক্ষে জাগরণ দেখা গেছে। কোথাও অবরোধ নেই, দমন নেই, বাইরের রাষ্ট্র আক্রমণও করছে না। সঙ্গে আছে রাষ্ট্রের সব জনগণের সমর্থন। এমনকি নারীরাও গণ–অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে ছিলেন। তাহলে গণ–অভ্যুত্থান শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত হচ্ছে না কেন?


বিপ্লব বা অভ্যুত্থান রক্ষা পায়, নেতৃত্বদানকারীদের মিত্রশক্তির ওপর। মিত্র জোটে কর্মসূচির ভিত্তিতে, শত্রুও জোটে একই কারণে। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের প্রধান কর্মসূচি ছিল ফ্যাসিবাদের উচ্ছেদ। ফ্যাসিবাদ হলো হিংসা-বিদ্বেষমূলক, বৈচিত্র্যময় স্ব–ব্যক্তিস্বাধীনতাবিরোধী অসহিষ্ণু ভাবনাকে বৈধতা দানকারী এমন চেতনা। এই চেতনার পক্ষে সম্মতি আদায় করা হয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে সন্ত্রাসের মিশেল ঘটিয়ে।


ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইগুলোতে কারা মিত্র? অভ্যুত্থানের দিনগুলোতে প্রমাণ হয়ে গেছে, তাঁরা হলেন শ্রমিক-কৃষক, ছোট ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী, নারী ও সংখ্যালঘু জাতি-ধর্মের নাগরিকেরা। গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে যেসব ছাত্র, তারা তাঁদেরই সন্তান। তাই চাকরির অধিকার চাইতে গিয়ে ফ্যাসিবাদকেই অপসারণ করতে হয়।


মুসোলিনি ও হিটলার মনে করতেন, নারীর কাজ গৃহে। বড়জোর চিকিৎসক ও শিক্ষকতার পেশায়। নারীর মঙ্গল নারীর বদলে তাঁরাই নির্ধারণ করে দিতেন। তাঁদের তৈরি আদর্শ নারীর মডেলে নারীরা ফিরে যাবেন ঘরে; আর পুরুষ কাজ করবেন বাইরে। হিটলার মেয়েদের ঘরে ফেরাতে করলেন ‘বেকারত্ব প্রতিরোধ আইন’। যে মেয়েটি কাজ থেকে সরে এসে গৃহিণী হতে রাজি থাকতে, তাকে সুদহীন ঋণ দেওয়া হলো। প্রতিটি সন্তানের জন্য চার ভাগের এক ভাগ মকুব করা হলো। নারী-পুরুষের বিয়ের বয়স কমানো হলো। ইতালিতে মুসোলিনি চার্চের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিবাহবিচ্ছেদ নিষিদ্ধ করলেন।


১৮৮৬ সালে আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকেরা জীবন দিয়েছেন। সেই থেকে মে দিবস পালিত হয়। শ্রমিকেরা যদি বিনোদনের সময় না পান, তাহলে তো তাঁকে মানুষ হিসেবেই স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। আট ঘণ্টা কর্মদিবস গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একটি ন্যূনতম বৈশিষ্ট্য। আশুলিয়া আর যাত্রাবাড়ীতে শ্রমিকদের গড়ে তুলতে হয় প্রতিরোধের স্তালিনগ্রাদ আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক মর্যাদা তাঁরা পাবেন না। পাওনা মজুরি চাইতে হয় রাস্তায়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও