
ভারত ও পাকিস্তানে মাথাগরমের যুদ্ধ
বলতে না বলতেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেল।
ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম দুদিন আগে– বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এই বিভাগেই, তার প্রথম দুটি বাক্য ছিল, “ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ বাধাতে পারে। যুদ্ধ যদি লেগেই যায়, আমি ভাবছিলাম আমরা কাকে সমর্থন করব।”'
যেটা শুরু হয়েছিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলাকে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের নেতাদের কথার যুদ্ধ দিয়ে, তা বড় আকারে সত্যিকার যুদ্ধে রূপ নিতে যাচ্ছে। সিএনএন বলেছে, “ভারত পাকিস্তান পরিপূর্ণ যুদ্ধের পথে আগাচ্ছে।”
এর আগে ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান পুরাদস্তুর যুদ্ধ লড়েছিল, সেই যুদ্ধ ছিল ১৭ দিনের। এখন এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ খুবই বিপজ্জন্ক। পরিস্থিতি আরও জটিল তিনটা কারণে–
১. তখন দুই দেশের কারোরই পারমাণবিক অস্ত্র ছিল না। এখন দুই দেশের জেনারেলরাই ব্রিফ কেস পারমাণবিক অস্ত্রের চাবি নিয়ে ঘুরছেন।
২. এই দুদেশের মধ্যে যে কোন সমস্যায় ধর্মীয় উগ্রতার চাপ সব সময় ছিল। এইবার এই চাপ আরো বেশি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিন্দুসভার মন্ত্র নিয়ে রাজনীতি করেন এবং হিন্দু ভোটারদের কড়া সমর্থন নিয়ে বারবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। কাশ্মীরের এই হামলার জবাব না দিলে তিনি জানেন তার ভোট ব্যাংকে টান লাগবে। অন্যদিকে, ছোট্ট আজাদ কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান খুশি নয়, জন্মের পর থেকেই পাকিস্তান ভারতের কাশ্মীরি মুসলমানদের ‘দুঃখ-দুর্দশা’ নিয়ে আচ্ছন্ন থেকে নিজেদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক বিকাশ স্থগিত করে রেখেছে। পাকিস্তানি জেনারেলদের ‘কাশ্মীর কার্ড’ আর মোদীর ‘হিন্দু প্রাইড’ এখন মুখোমুখি। ধর্মীয় উম্মাদনা নিয়ে যুদ্ধ করে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ ধ্বংসের কাছাকাছি। আশা করি উপমহাদেশের এই দুটি দেশ পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আগেই তাদের হুঁশ ফিরে পাবে।
৩. আগে যেমন ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে এই দুই দেশের মুরব্বি ছিল। ভারত এত শক্তিশালী ছিল না তখন। তাদেরকে তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর নির্ভর করতে হতো সামরিক ও রাজনৈতিক সমর্থনের জন্য। পাকিস্তানের মুরব্বি ছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়ে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অনেকটাই হারিয়েছে। একাকী পাকিস্তান দুর্বল হলেও হানাহানি করার ক্ষেত্রে আরও স্বাধীনতা পেয়েছে। সুতরাং এই দুই দেশের হানাহানি ও যুদ্ধবিগ্রহে জড়িয়ে পড়াটা আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কোনো জাদু সম্ভবত এই দুই দেশের ওপর খাটবে না।
এইগুলো বিবেচনা করলে মনে হবে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরো জটিল হবে। তবে দুয়েকটা উজ্বল আশাবাদও দেখা যাচ্ছে। ভারত এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনো সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করেনি। পাকিস্তান ভারতের একটা সামরিক চকি বা পাহারা কেন্দ্রে হামলা করেছে মাত্র। বাকি আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ সব সীমান্তের সিভিলিয়ানদেরকে ঘিরে। পাকিস্তান বলেছে তারা ৫টা ভারতীয় মিগ নষ্ট করেছে। ভারত অস্বীকার করেছে। ভারত পাকিস্তানের কয়টা এফ-১৬ নামিয়েছে তা এখনো জানায়নি। অচিরেই জানা যাবে। এই দুই দেশের সামরিক যুদ্ধে এই এক স্নায়ু যুদ্ধ– কে কার কয়টা বিমান ভাঙছে আর ট্যাঙ্ক ধ্বংস করছে– দুই পক্ষই অতিরঞ্জিত সংখ্যা জানাবে নিজেদের প্রাধান্য দেখাতে।
আমি আগেই বলেছি কাশ্মীর সমস্যার কোনো সমাধান নেই, ভারত পাকিস্তান সমস্যাও কোনোদিন মিটবে না। এ যেন সেই জটিল গাণিতিক সমস্যার মতো– জাদরেল সব গণিতজ্ঞরাই স্বীকার করে নিয়েছেন এর কোনো সমাধান নেই।
সবে মাত্র শুরু। কোথায় শেষ হবে এই যুদ্ধ বলা যায় না। আমাদেরকে প্রতিদিন বা প্রতি ঘণ্টাতেই খোঁজ নিতে হবে। তবে যুদ্ধের যাই হোক না কেন, শেষটা এখনই বলে দেয়া যায়। আজাদ কাশ্মীর ‘আজাদ’ই থাকবে। মূল কাশ্মীর ভারতের অংশ হয়েই থাকবে। আরো সাধারণ মানুষ মারা যাবে দুই পক্ষেই, ওদের মা-বাবারা কাঁদবে। পাকিস্তানের দুই-চারজন জেনারেল ভূষিত হবেন ‘নিশানে হায়দার’, ‘নিশানে ইমতিয়াজ’ এইসব পদকে। ভারতীয় জেনারেলেরা পাবেন ‘পরম বীরচক্র’ ও ‘মহা বীরচক্র’।
এই যুদ্ধে কাউকেও সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশের কাজ নেই, লাভও নেই। বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে কিছু মিছিল-শোভাযাত্রা হয়তো হবে। আমরা যারা শান্তিবাদী তারা বলব, যে সমস্যার সমাধান নেই তা নিয়ে যুদ্ধ করার কোনো অর্থ নেই। আর ওই দুই যুদ্ধংদেহী দেশকে বলব, ঘুমাতে যাও। যে অংকের সমাধান নেই তা নিয়ে মাথা গরম করে লাভ নেই।
- ট্যাগ:
- মতামত
- যুদ্ধ ও সংঘাত
- ভারত-পাকিস্তান