
আকাশ প্রতিরক্ষায় কে এগিয়ে, পাকিস্তান কি ভারতের আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম
ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গড়াল। এরই মধ্যে পাকিস্তানে ২৬ এবং ভারতে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) তুমুল গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত তিনটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো কোন দেশের, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা তিনটি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানসহ ভারতের একটি সুখোই-৩০ ও একটি মিগ-২৯ ভূপাতিত করেছে। বেশ কয়েকটি ড্রোনও ধ্বংস করার দাবি করেছে পাকিস্তান। সেই সঙ্গে ৫ ভারতীয় পাইলটকে আটক করার দাবিও করা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্রের আনুষ্ঠানিক বিবরণ মিলছে। তারা যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বোমা ব্যবহার করেছে। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ ও হামলায় কী ব্যবহার করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। শুধু সীমান্তে ভারী গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।
ভারতের বেসরকারি ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিসার্চ উইং ও ওয়াশিংটন–ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের তথ্যের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি তুলনামূলক ধারণা পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, দীর্ঘপাল্লার সক্ষমতা ও বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামোর কারণে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাকিস্তানের চেয়ে উন্নত। তবে পাকিস্তানের কৌশলগত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভারতের জন্য কম হুমকি নয়। বিশেষ করে, দুই দেশের সামরিক কৌশল ও ভূরাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এদিক বিবেচনায় আধুনিক প্রযুক্তি ও সক্ষমতায় পিছিয়ে থাকলেও কাছাকাছি দূরত্বে ভারতের যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে পাকিস্তান কার্যকর একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে বলা যায়।
নিচে দুই দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক বিবরণ তুলে ধরা হলো:
ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ আকাশ থেকে আসা যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় ভারত একটি শক্তিশালী, বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এর প্রধান কয়েকটি ব্যবস্থা হলো—
-এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ (৪০০ কিলোমিটার পাল্লা) : রাশিয়া থেকে ২০২১ সালে পাওয়া এস-৪০০ বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এটি মাল্টি-এএসএ রাডার ব্যবহার করে, একসঙ্গে ১০০টি লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে এবং একই সঙ্গে ৩৬টিতে আঘাত হানতে পারে। এই রাডারব্যবস্থার শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণের পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার। এটি শত্রুর আকাশসীমার গভীরে থাকা স্টিলথ বিমান (রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম আকাশযান), ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ যেকোনো হুমকিকে ঠেকিয়ে দিতে পারে। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সীমান্তে এই ইউনিট মোতায়েন করেছে ভারত।
-বারাক-৮ (৭০-১০০ কিলোমিটার পাল্লা) : ভারত ও ইসরায়েলের যৌথভাবে তৈরি মাঝারি পাল্লার এই ব্যবস্থা মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্টের জন্য এএসএ রাডার ব্যবহার করে এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরোধে কার্যকর। এটি নৌ ও স্থল উভয় প্ল্যাটফর্মে মোতায়েন করা হয়েছে।
-আকাশ ও আকাশ-এনজি (৩০-৭০ কিলোমিটার পাল্লা) : দেশীয়ভাবে তৈরি এই ব্যবস্থাগুলোতে এএসএ রাডার রয়েছে এবং এটি একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। আকাশ-এনজি-এর পাল্লা পরে বাড়ানো হয়েছে এবং এর নির্ভুলতাও উন্নত করা হয়েছে।
-কিউআরএসএএম (২৫-৩০ কিলোমিটার পাল্লা) : দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম, স্বল্পপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ৩৬০-ডিগ্রি এএসএ রাডার কভারেজযুক্ত। এটি দ্রুতগতির লক্ষ্যবস্তু এবং সম্মুখ অবস্থানে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
-স্পাইডার (১৫-৩৫ কিলোমিটার পাল্লা) : ইসরায়েলের তৈরি এই স্বল্পপাল্লার প্রতিরক্ষাব্যবস্থাটি অনেক নিচ দিয়ে উড়ে আসা হুমকির বিরুদ্ধে কার্যকর।
-পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স (পিএডি) ও অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স (এএডি) : ভারতের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা (বিএমডি) ব্যবস্থার অংশ এটি। এটি ৫ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে উড়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রকেও বাধা দিতে সক্ষম।
-এসআরএসএএম (২৫ কিলোমিটার পাল্লা) : নৌবাহিনীর স্বল্পপাল্লার এই ব্যবস্থাটি আইএনএস বিক্রান্তের মতো সামরিক স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষায় ব্যবহার করা হয়।
পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। তবে এখনো সীমিত এবং চীনের প্রযুক্তির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এর প্রধান কয়েকটি ব্যবস্থা হলো:
-এইচকিউ-৯ পি/৯ বিই (১০০-২৬০ কিলোমিটার পাল্লা) : সবচেয়ে উন্নত এই ব্যবস্থা ২০২১ সালে পায় পাকিস্তান। এটি চীনের এইচকিউ-৯-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি, আবার রাশিয়ার এস-৩০০-এর কিছু উপাদানও রয়েছে। এইচকিউ-৯ বিই ২৬০ কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এবং এর সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা রয়েছে। এটি জেএসজি-৪০০ ও জেপিজি-৬০০ রাডার ব্যবহার করে। তবে এটি এস-৪০০-এর চেয়ে কম আধুনিক।
-এফডি-২০০০ (১২৫ কিলোমিটার পাল্লা) : এইচকিউ-৯ এ-এর রপ্তানি সংস্করণ এটি। এটি এইচটি-২৩৩ রাডার ব্যবহার করে বিমান ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করতে পারে। এটি মার্কিন প্যাট্রিয়ট পিএসি-৩-এর চেয়ে বৃহত্তর পরিসরে কভারেজ দিতে পারে। তবে ব্যালিস্টিক হুমকির বিরুদ্ধে কম কার্যকর।
-এইচকিউ-১৬ এফই/এলওয়াই-৮০ (৪০-৭০ কিলোমিটার পাল্লা) : রাশিয়ার বুক-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি মাঝারি পাল্লার এই ব্যবস্থা বিমান ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর। এইচকিউ-১৬ এফই স্বল্প ও দীর্ঘপাল্লার প্রতিরক্ষার মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করে।
-এফএম-৯০ (১৫ কিলোমিটার পাল্লা) : স্বল্পপাল্লার এই ব্যবস্থা পয়েন্ট ডিফেন্সের জন্য তৈরি, যা ভারতের স্পাইডারের সঙ্গে তুলনীয়। তবে এর ব্যবহার ততটা বহুমাত্রিক নয়।
-ম্যানপ্যাডস (যেমন, আরবিএস-৭০ এনজি) : বহনযোগ্য এই স্বল্পপাল্লার ব্যবস্থাগুলো নিচ দিয়ে উড়ে আসা হুমকির জন্য কার্যকর। তবে এর পরিধি সীমিত।
- ট্যাগ:
- আন্তর্জাতিক