
রিকশা সমস্যার একমাত্র সমাধান কি নতুন নকশা?
রিকশা নিয়ে আলোচনা বহুদিনের। কিন্তু বর্তমানে এই বাহনটির অধিক্য জনরোষের কারণ হচ্ছে বলে বলা হচ্ছে। আমাদের প্রায় সবার ব্যক্তিগত জীবনে রিকশার ওপর নির্ভরশীলতা যেমন রয়েছে, তেমনি এটিকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানা বিড়ম্বনাও। বর্তমানে দেশে এমন সড়ক খুব কমই পাওয়া যাবে যেখানে রিকশার দেখা পাওয়া যায় না। সবকিছু ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু রিকশার সংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে পড়ায় এটি এখন একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে, যা সবাই সহজেই অনুধাবন করতে পারেন।
এই রিকশা নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়েছে, ঢাকার রিকশা ব্যবস্থাকে আধুনিক ও নিরাপদ করতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের একটি দল ঢাকার রাস্তার জন্য উপযোগী নতুন একটি নকশা প্রস্তাব করেছে। রিকশার এই নতুন নকশা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে প্রশ্ন হলো, এই নকশা কি আদৌ ঢাকার রিকশা সমস্যার সমাধান করতে পারবে?
প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, নতুন নকশায় ১৬টি বৈশিষ্ট্য থাকবে, যার মধ্যে ১২টি নিরাপত্তা-সংক্রান্ত। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রিকশা নিয়ে যে সমস্যা, তার মধ্যে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়গুলো কতটা বিবেচিত বা উল্লেখিত হয়েছে, তা একটি বড় প্রশ্ন। নিরাপত্তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং ফেলে দেবার মতো বিষয় নয়। তবে এটি কি রিকশার সংখ্যাজনিত সমস্যার সমাধান করবে? এই প্রশ্ন উঠছে কারণ, রিকশার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এরা অলিগলি ছেড়ে রাজপথ, ফ্লাইওভার, এমনকি হাইওয়েতেও চলাচল করছে। এই সমস্যা এতটাই প্রকট যে, রিকশার প্রবেশ ঠেকাতে বিশেষ ধরনের ব্রেকার বা বন্ধনী স্থাপন করা হয়েছে। এই ব্রেকারের ওপর দিয়ে রিকশা চললে চাকা আটকে যায় বা বেঁকে যায়, ফলে রিকশাকে মূল সড়কে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া যায়। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ। কারণ সমস্যার মূল রয়েছে এখানেই।
নিরাপত্তার বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা মূলত যানবাহনের দুর্ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত। রিকশার মতো কম গতির বাহন যখন দ্রুতগতির সড়কে প্রবেশ করে, তখন এটি সড়কের গতিপ্রবাহে প্রভাব ফেলে বা দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করে। ফলে রিকশাকেন্দ্রিক দুর্ঘটনার সংবাদ আমরা প্রায়ই পাই।
রিকশা বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ, বিশেষ করে ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে। এটি সাশ্রয়ী মূল্যে স্বল্প দূরত্বের যাতায়াত এবং লাখো মানুষের জীবিকা নিশ্চিত করে। তবে, রিকশার অতিরিক্ত সংখ্যা, অনিয়ন্ত্রিত চলাচল এবং নিরাপত্তার ঘাটতি এটিকে একটি জটিল শহুরে সমস্যায় রূপান্তরিত করেছে। সম্প্রতি, ঢাকার রিকশা ব্যবস্থাকে নিরাপদ ও আধুনিক করার লক্ষ্যে একটি নতুন ধরনের রিকশার নকশা প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, এই নকশা কি রিকশা-সংক্রান্ত সমস্যার মূল সমাধান?
ঢাকার রিকশা সমস্যার প্রকৃতি
ঢাকায় রিকশার বিপুল সংখ্যা সমস্যার মূল কারণ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) ২০১৯ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় রিকশার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে নিশ্চয়ই তা আরও বেশ বেড়েছে এবং এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা (ইজি বাইক)। এই বিশাল সংখ্যা নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো সৃষ্টি করছে:
যানজট: রিকশার ধীর গতি এবং মূল সড়কে প্রবেশ ঢাকার যানজটকে আরও তীব্র করেছে। ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, রিকশা ঢাকার যানজটের একটি প্রধান কারণ।
নিরাপত্তা ঝুঁকি: রিকশার কম গতি এবং দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে মিশ্রণ দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রিকশা-সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় ১০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
অনিয়ন্ত্রিত চলাচল: নির্দিষ্ট লেন বা রুটের অভাবে রিকশা ফ্লাইওভার ও হাইওয়েতে প্রবেশ করে, যা বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বিদ্যুৎ ঘাটতির চাপ: ব্যাটারিচালিত রিকশার চার্জিং জাতীয় গ্রিডের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
এই সমস্যা মোকাবিলায় মূল সড়কে রিকশার প্রবেশ ঠেকাতে বিশেষ ব্রেকার বা বন্ধনী বসানো হয়েছে, যা রিকশার চাকা আটকে দেয়। তবে এটি সমস্যার আংশিক সমাধান মাত্র।
নতুন রিকশার নকশা: মূল বৈশিষ্ট্য
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন রিকশার নকশায় ১৬টি বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হয়েছে, যার ১২টি নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক। প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক: তিনটি চাকায় হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক যুক্ত করা হবে, যা ব্রেকিংয়ের কার্যকারিতা বাড়াবে।
ব্যাটারিচালিত সিস্টেম: রিকশাটি ব্যাটারিচালিত, যা জ্বালানিচালিত যানের তুলনায় পরিবেশবান্ধব।
কাঠামোগত উন্নতি: শক্তিশালী ফ্রেম এবং নতুন হাব সিস্টেম, যা ডিস্ক ব্রেক স্থাপনের জন্য প্রয়োজন।
নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য: সিট বেল্ট, উন্নত আলোক ব্যবস্থা, রিফ্লেক্টর এবং সম্ভাব্য শক্তিশালী ছাউনি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ব্যাটারিচালিত রিকশা