
পাহাড়ে স্বস্তি এসেছে, শান্তিও আসুক
অপহরণের সাত দিন পর পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তি পাওয়া আনন্দের খবরই বটে।
অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক অপহরণের ঘটনা ঘটলেও এই প্রথম শিক্ষার্থীরা এর লক্ষ্যবস্তু হলেন। অপহরণের শিকার পাঁচজনই ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পাহাড়ে বৈসাবি উৎসবে অংশ নিতে তঁারা গিয়েছিলেন রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে।
পাঁচ শিক্ষার্থীর অপহরণে তাঁদের সহপাঠী–স্বজনেরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। উদ্বিগ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। এমন একটি সময়ে এই পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়, যখন পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ বৈসাবি উৎসবে ব্যস্ত।
পাঁচ শিক্ষার্থীর অপহরণের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। আন্দোলন করেছেন তিন পার্বত্য জেলার সর্বস্তরের মানুষ। এমনকি ঢাকায়ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ মানববন্ধন করেছে।
অনেক উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার পর বুধবারই জানা গেল অপহরণকারীরা সাত দিনের মাথায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দিয়েছেন। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের একজন নেতার সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, পিসিপি সদস্য রিশন চাকমাসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণকারীরা কয়েক দফায় মুক্তি দিয়েছেন। অর্থাৎ একবার তাঁদের ছাড়েননি। তাঁরা মা–বাবার কাছে এখন সুস্থ আছেন। তবে ট্রমা কাটেনি।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিজু উৎসব উদ্যাপন শেষে ফেরার পথে ১৬ এপ্রিল সকালে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে পাঁচ শিক্ষার্থী ও তাঁদের বহন করা অটোরিকশার চালককে অজ্ঞাতনামা স্থানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র রিশন চাকমা, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপহরণকারীরা চালককে ওই সময় ছেড়ে দিয়েছিলেন।
পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনায় শুরু থেকে ইউপিডিএফকে দায়ী করে আসছে জেএসএস–সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। যদিও ইউপিডিএফ অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
এর আগে গত বছর ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা বাজারে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করেছিল কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এএনএফ) নামের একটি সংগঠন। ২০২২ সালে বম জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে গঠিত এই সংগঠনের কার্যক্রম বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি এবং রাঙামাটির বিলাইছড়ি এলাকায় সীমিত।
কেএনএফের সশস্ত্র দল রাতে ব্যাংকে হামলা চালায় এবং ব্যাংকের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের জিম্মি করে। এরপর পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কাছ থেকে দুটি সাবমেশিনগানসহ (এসএমজি) ১৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করেন কেএনএফের সদস্যরা। তাঁর মুক্তির জন্য ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ৪৮ ঘণ্টা পর মুক্তি দেওয়া হয় তাঁকে। ওই ঘটনার পর কেএনএফ অনেকটা নিষ্ক্রিয়। এর সঙ্গে ভূরাজনীতির সম্পর্কও থাকতে পারে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মুক্তি
- অপহরণ
- পাহাড়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি