সাতচল্লিশের দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের খুলনায় আসা বাংলা সাহিত্যের অগ্রগণ্য কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক লিখেছিলেন, 'এ দেশে চলে এলাম। তখন আমার বয়স ১৬ কি ১৭। এ দেশে আসার পর যেন জন্মান্তর ঘটে গেল আমার। সবুজ-শ্যামল মায়ায় ঘেরা দেশ। প্রথম যৌবনেই এক নদীবহুল, জমাট বাঁধা সবুজ রঙের হিরের মতো দেশে এলাম খুলনা শহরে। আমরা থাকতাম ভৈরব নদীর পারে।'
ভৈরব-রূপসার কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগর খুলনা 'শিল্পশহরের' মর্যাদা হারিয়েছে অনেক আগেই। শহরের বুকে জালের মতো ছড়িয়ে থাকার খালগুলোর বেশিরভাগ এখন মৃত কিংবা মৃতপ্রায়। শহরের 'জমাট বাঁধা সবুজ' রঙও ফিকে হয়েছে অনেকটা। আছে নাগরিক সুবিধার অভাব।
কিন্তু এই 'আত্মঘাতী উন্নয়নের কালে' বাসযোগ্যতার প্রশ্নে এখনো এ শহরের প্রতিদ্বন্দ্বী বিরল। এখানে এখনো প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ আছে। আছে মাছের প্রাচুর্য। আছে মায়া।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গৌরবময় এ শহর খুলনার জন্মদিন আজ ২৫ এপ্রিল। ১৮৮২ সালের এই দিনে যশোর জেলার খুলনা ও বাগেরহাট এবং চব্বিশ পরগনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমা নিয়ে খুলনা জেলা সৃষ্টির নোটিশ জারি হয়।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হিসেবে গড়ে ওঠা এই জনপদের ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ, বহুস্তরবিশিষ্ট আর বর্ণিল।