আফগান শরণার্থীরা কি বলির পাঁঠা হচ্ছে

www.ajkerpatrika.com এম আর রহমান প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৬

পাকিস্তান সে দেশে বসবাস করা আফগান শরণার্থীদের ব্যাপকভাবে বহিষ্কার করতে শুরু করেছে। চলতি এপ্রিলের মধ্যে ৮০ হাজার শরণার্থীকে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য রয়েছে পাকিস্তান সরকারের। বলা যায়, এই সিদ্ধান্ত আফগান শরণার্থীদের কাছে বজ্রাঘাতের মতো হয়ে এসেছে। কোথায় যাবে তারা? তালেবানশাসিত আফগানিস্তানে ফেরার মতো অবস্থা কি আছে?


যুদ্ধবিগ্রহের কারণে দশকের পর দশক ধরে আফগানিস্তানের এসব নাগরিক পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন। এদের অনেকেই পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেখানে বিয়ে করেছেন, সন্তানসন্ততিও আছে। তাঁরাও পাকিস্তানে বেড়ে উঠেছেন। আফগানিস্তানে তাঁদের কখনোই যাওয়া হয়নি। তাঁরা বুঝতে পারছেন না, আফগানিস্তানে গিয়ে তাঁরা কী করবেন, কিংবা তাঁদের জন্য সেখানে কী অপেক্ষা করছে।


কিছু প্রদেশে, যেমন খাইবার পাখতুনখোয়ায়, স্থানীয় জনগণ আফগান শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাদের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত মিল এবং পারিবারিক সম্পর্কের কারণে অনেক আফগান এই অঞ্চলে থেকে যেতে চান। অনেকেই বলছেন, তাঁদের মেয়েরা পাকিস্তানের স্কুলগুলোতে পড়ালেখা করছে। কিন্তু আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হলে তাদের আর পড়াশোনা করতে দেওয়া হবে না। কারণ তালেবান সরকার নারীদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। নারীদের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ এবং চলাফেরার স্বাধীনতা সীমিত করেছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় আফগানিস্তানে খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ অনাহার ও রোগের ঝুঁকিতে পড়েছে।



পাকিস্তানের এই পদক্ষেপে আফগানিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। আফগান সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের এই পদক্ষেপকে ‘একতরফা’ ও ‘অমানবিক’ হিসেবে নিন্দা করা হয়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এই বহিষ্কারের পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা পাকিস্তানকে আফগান নাগরিকদের ফেরত পাঠানো থেকে বিরত থাকতে এবং ‘নন-রিফাউলমেন্ট’ (অবৈধভাবে ফেরত পাঠানো নিষিদ্ধ) নীতি মেনে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা সতর্ক করেছেন যে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হলে শরণার্থীরা হয়রানি, নির্যাতন বা মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো পাকিস্তানের এই পদক্ষেপকে ‘মৃত্যুদণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে; বিশেষ করে নারীদের জন্য, যাঁরা তালেবানের শাসনে ফেরত গেলে নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি) সতর্ক করেছে যে এই বহিষ্কার অভিযানটি একটি বৃহত্তর মানবিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

তবে এটা পাকিস্তান সরকারের নতুন কোনো পদক্ষেপ নয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শরণার্থী বিতাড়নের এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ আফগান শরণার্থীকে বিতাড়ন করা হয়েছে।


এই পদক্ষেপের জন্য পাকিস্তান সরকার আফগান শরণার্থীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে, বিশেষ করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিতদের বিরুদ্ধে। তারা দাবি করেছে যে আফগান শরণার্থীরা পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা ও আত্মঘাতী বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত। নিরাপত্তার উদ্বেগ থেকে নতুন করে বিতাড়নের এই সিদ্ধান্ত।


দীর্ঘদিন ধরে ৪০-৫০ লাখ আফগান শরণার্থী পাকিস্তানে অবস্থান করছে, যা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমে যাওয়ার পর পাকিস্তানে শরণার্থী ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তা কমে যাওয়ায় শরণার্থীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ পাকিস্তান নিজেই এখন অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও