মহিষের কাঁচা দুধের দই: স্বাদে ভরা ঐতিহ্য নাকি স্বাস্থ্যঝুঁকি?

প্রথম আলো ড. এ কে এম এম হুমায়ুন কবির প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৫, ১৬:২৪

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নোয়াখালীর সুবর্ণচর—যেন প্রকৃতির সাজানো এক সবুজ দ্বীপ। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের নরম সবুজ ঘাসে অবাধে চরে বেড়ানো মহিষের দল এই এলাকার অনন্য সৌন্দর্যের অংশ। এই মহিষের দুধ শুধু পরিমাণে বেশি নয়, স্বাদ ও ঘনত্বেও অতুলনীয়। আর ঠিক এই গুণই সুবর্ণচরের দইকে দিয়েছে বিশেষ পরিচিতি।


দই হলো একধরনের ফারমেন্টেড (গাঁজানো) দুগ্ধজাত খাদ্য, যা দুধে বিশেষ উপকারী ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্রমে প্রস্তুত হয়। এই প্রক্রিয়ায় ল্যাকটোব্যাসিলাস বুলগারিকাস এবং স্ট্রেপটোকক্কাস থার্মোফিলাস ব্যাকটেরিয়া দুধে থাকা ল্যাকটোজকে (দুধের চিনি) ল্যাকটিক অ্যাসিডে রূপান্তর করে। এর ফলে দই পায় স্বতন্ত্র টক স্বাদ ও ঘন, মসৃণ গঠন। সুবর্ণচরের মহিষের দুধের প্রাকৃতিক ঘনত্ব ও স্বাদ এই দইয়ের স্বাদে যোগ করে বাড়তি মাত্রা।


এখানকার কাঁচা দুধের দই বহু প্রজন্ম ধরে স্থানীয় সংস্কৃতি, অতিথি আপ্যায়ন ও বিশেষ অনুষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিয়েশাদি থেকে শুরু করে ঈদ, পূজা কিংবা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে এর চাহিদা আকাশছোঁয়া, যা প্রমাণ করে মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা। তবে এত জনপ্রিয়তা ও ঐতিহ্যের মাঝেও প্রশ্ন রয়ে যায়—এই সুস্বাদু দই কি সত্যিই স্বাস্থ্যসম্মত, নাকি এর ভেতরে লুকিয়ে আছে কিছু অজানা ঝুঁকি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই শুরু হয় এক বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান।


গবেষণার উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট: এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে, লেখকের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি ও পোলট্রি সায়েন্স বিভাগের একটি গবেষণা দল নোয়াখালীর সুবর্ণচরকে বেছে নিয়েছে। মূল উদ্দেশ্য ছিল মহিষের কাঁচা দুধের দইয়ের গুণগত মান ও সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি যাচাই করা, পাশাপাশি দই তৈরির প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা।


গবেষণা দল মনে করে, নোয়াখালীর মহিষের কাঁচা দুধের দইকে সারা দেশে জনপ্রিয় করতে হলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন গুণগত মান নিশ্চিত করা। তাই তারা শুধু ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেই থেমে থাকেনি, বরং মাঠপর্যায়ে গিয়ে দই তৈরির ধাপগুলোও নথিভুক্ত করেছে।


ঐতিহ্যবাহী দই তৈরির প্রক্রিয়া: স্থানীয় কারিগরেরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় এই দই তৈরি করে আসছেন। কারিগরেরা প্রথমে মহিষের দুধ সংগ্রহ করে তার মান যাচাই করেন। প্রথম ধাপে মহিষের দুধ সংগ্রহ ও মান যাচাই করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে দুধ ছেঁকে ২-৪ ঘণ্টা ঠান্ডা করা হয়। তৃতীয় ধাপে ঠান্ডা দুধ মাটির পাত্রে রাখা হয়। চতুর্থ ধাপে প্রাকৃতিকভাবে দুধের গাঁজন হয়ে দইয়ে রূপান্তর করা হয়। পঞ্চম ধাপে পরদিন দইয়ের উপরিভাগের ছানার পানি অপসারণ করে নতুন কাঁচা দুধ যোগ করা হয়। ষষ্ঠ ধাপে মিশ্রণকে ২-৩ দিন পরিপক্ব হতে দেওয়া হয়। সপ্তম ধাপে বিক্রির জন্য প্রস্তুত দই বাজারে পাঠানো হয়।


অতিরিক্ত প্রক্রিয়া: বিক্রি না হলে সেই দই থেকে ছানা, চিজসহ নানা পণ্য তৈরি। এই পুরো প্রক্রিয়ায় দুধ কখনোই পাস্তুরাইজ করা হয় না, যা একদিকে স্বাদের স্বকীয়তা বজায় রাখে, অন্যদিকে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করে।


গবেষণার বিশ্লেষণ: গবেষকেরা নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকা থেকে মহিষের কাঁচা দুধের তৈরি দই সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণের জন্য নিয়ে আসেন।


সেখানে দইয়ের গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য তিন ধরনের পরীক্ষা পরিচালিত হয়— (১). সংবেদনশীল পরীক্ষা: বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে দইয়ের রং, গন্ধ, স্বাদ, গঠন এবং সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা ৯ ধাপের হেডোনিক স্কেলের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। (২). রাসায়নিক পরীক্ষা: অম্লত্বের মাত্রা ০.৫৩% থেকে ০.৭৩% (স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি), চর্বির পরিমাণ: ৫.৫৮% থেকে ৮.০৩% (কিছুটা কম), প্রোটিনের পরিমাণ: ৩.৩% থেকে ৪.৪ %, ও কেসিনের পরিমাণ: ২.৫৬ %থেকে ৩.৪২ %। (৩). অণুজীব–সংক্রান্ত পরীক্ষা: নমুনায় ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত হলেও সালমোনেলা জীবাণু পাওয়া যায়নি।


সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি: যদিও মহিষের কাঁচা দুধের দই স্বাদে অতুলনীয়, তবে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা করা যায় না—


ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি: পাস্তুরাইজ না করায় ই. কোলাই, ক্যাম্পিলোব্যাকটারসহ ক্ষতিকর জীবাণু থাকতে পারে, যা ডায়রিয়া, খাদ্যবাহিত সংক্রমণসহ নানা রোগের কারণ। মহিষের দুধ গরুর দুধের তুলনায় বেশি ঘন ও ফ্যাটসমৃদ্ধ হওয়ায় হজমে সমস্যা হতে পারে, বিশেষত ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে।


উচ্চ ফ্যাট কনটেন্ট ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে মহিষের দুধ বা দই অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা দেখা দেয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও