হাসিনার পতনের পর নতুন রাজনৈতিক দল গঠন কতটা কঠিন

প্রথম আলো প্রতীক বর্ধন প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২০:১৯

বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন যে প্রকৃতপক্ষেই কঠিন বা আপাত-অসম্ভব এক বাস্তবতা, সে বিষয় আবারও উঠে এল যোগাযোগ পেশাজীবী ও শিক্ষক খান মো. রবিউল আলমের প্রকাশিত লেখায়। ‘হাসিনার পতনে গ্রামেগঞ্জে প্রভাব ও আওয়ামী কর্মীদের ভাবনা কী’ শীর্ষক ওই লেখায় তিনি দেশের গ্রামাঞ্চলের নির্জলা বাস্তবতাই তুলে ধরেছেন।


খান মো. রবিউল আলমের লেখার মূল বক্তব্য হলো, বাংলাদেশের মানুষ এখনো দ্বিদলীয় বা বড়জোর তৃতীয় দলের বাইরে যে কিছু ভাবতে পারে না, এর নানা কারণ আছে। সেই কারণগুলো দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবন থেকে তুলে এনেছেন তিনি। সে জন্য তাঁর বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্য।


খান মো. রবিউল আলমের লেখা থেকে উদ্ধৃত করা যাক, ‘স্থানীয় জনগণ নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টায় জনগণ বিএনপিকে আগামী দিনের প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে। গ্রামীণ রাজনৈতিক ক্ষমতাকাঠামোয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে জনগণ বিশেষ কিছু ভাবছে না। কারণ, জনগণের রাজনৈতিক আচরণের অভ্যস্ততা কেবল ভোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; জীবন-জীবিকা, সামাজিক নিরাপত্তা, প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা মাড়িয়ে এর শিকড় অনেক গভীরে। জনগণের ক্ষমতাপ্রিয়তা বা ক্ষমতাসখ্যের তীব্র অনুভূতি প্রচলিত রাজনীতির একটি বিশেষ দিক, যার ভিত্তি হলো রাজনৈতিক দলকেন্দ্রিক এক বিশেষ সুবিধাবাদী ব্যবস্থা। মতাদর্শের চেয়ে অনেক বেশি অনুগামী ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে।’


বিষয়টি হলো, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় ৮৫ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতনির্ভর। অর্থাৎ দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। তাঁরা নানাভাবে কমাই-রোজগার করছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁদের জীবনে রাষ্ট্রের ভূমিকা খুবই সীমিত। সম্প্রতি সরকারের এক জরিপেও উঠে এসেছে, দেশে গত ১০ বছরে অনানুষ্ঠানিক খাতের আকার বেড়েছে, যদিও এই সময় জিডিপিও বেড়েছে কয়েক গুণ। ঠিক সেখানেই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা সামনে চলে আসে। বিশেষ করে বড় বড় শহরের শ্রমজীবী মানুষের জীবন এই নেতাদের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। গ্রামাঞ্চলেও তার ব্যতিক্রম হয় না। উপবৃত্তি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির মতো বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় আসতে গ্রামের মানুষদের রাজনৈতিক নেতার দ্বারস্থ হতে হয়। সেই সঙ্গে জমিজমার বিবাদ, সালিশ, বিচার—এমন কোনো বিষয় নেই, যার সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ততা নেই।


রাজনৈতিক অর্থনীতির এই অমোঘ নিয়ম থেকে কারও নিস্তার নেই। শহরাঞ্চলে এই মানুষের বস্তিতে থাকা, বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সেবা লাভ, এমনকি রুটিরুজির সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীরা এমনভাবে জড়িত যে এই ব্যবস্থায় অন্য কারও পক্ষে প্রবেশ করা একপ্রকার অসম্ভব। যদিও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নানাভাবে সেই চেষ্টা করছে বলে প্রতীয়মান হয়।


সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে দেশে যে পরিবর্তন এসেছে, শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্তের কাছে তা যতই ফ্যাসিবাদের পতন বা নতুন বন্দোবস্তের সূচনা মনে হোক না কেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে বিষয়টি নিছক ক্ষমতারই পটপরিবর্তন। লেখক বলছেন, ‘একটি পর্যবেক্ষণ হলো, গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ঢাকার বাইরে নেওয়া সম্ভব হয়নি। শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্থানীয় জনগণ গণ-অভ্যুত্থানের মুখে একটি সরকারের পতন হিসেবেই দেখছে। গণ-অভ্যুত্থানের মর্মবাণী ঢাকার ফ্রেমে আটকে আছে। এটা মর্মান্তিক ব্যাপার। “রাজনৈতিক বন্দোবস্ত” বা “নতুন বয়ান” কিংবা “অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ” বিনির্মাণের স্বপ্ন মাঠঘাটে নেই।’


লেখকের এই পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে নির্মম বাস্তবতাই উঠে আসে। এই গণ–অভ্যুত্থান যে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক চেতনা বা প্রচারণার ভিত্তিতে হয়নি, বরং সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সাবেক সরকারের নির্মম দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অভূতপূর্ব ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে সেই বাস্তবতার প্রতিভাত হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও