প্রগতিশীল ঐক্য কেন দরকার

বিডি নিউজ ২৪ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৬

অন্তর্বর্তী সরকারের নামকরণের ভেতরেই তাদের দায়িত্বের পরিসর নির্ধারিত রয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার আগে একটি অনির্বাচিত শক্তি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। তাই সরকারের প্রধান দায়িত্ব অনির্বাচিত শাসনব্যবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিত্বের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সেই নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রাখার নিশ্চয়তা বিধান করা। অর্থাৎ, গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এই ধরনের সরকারের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে।


বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পেয়েছে, সেই অভ্যুত্থান বৈষম্যবিরোধিতার কারণে ব্যাপকতা পেয়েছে। বৈষম্য ও শোষণের জাঁতাকলে দেশে যে সাম্যহীনতার কাঠামো তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে, সেই কাঠামো ভাঙার আকুলতা থেকে অভ্যুত্থানের সূত্রপাত। ফলে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায় কেবল নির্বাচন অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সেই নির্বাচনের ভেতর দিয়ে জনগণের জীবনে তাত্ত্বিক ও বাস্তবসম্মত ন্যায়ের প্রবাহ ফিরিয়ে আনার দিকনির্দেশনা স্থির করে দেওয়াও তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এই দুটিই মূলত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যপরিধি।


এই সরকারই প্রথমবারের মত এমন কাজের দায়িত্ব পায়নি। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এই রকম অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার সূত্রপাত হয়েছিল। সেই সরকার মাত্র তিন মাসে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার উদাহরণ রেখে গেছে।


অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দায়িত্ব দেওয়ার সময় সবার আগে যে প্রশ্ন সামনে আসে, সেটি হল অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে গেলে কতটা সময় লাগতে পারে? প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আমার যখন সাক্ষাৎ হয়, তখন তিনিও জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই কাজটা করতে গেলে কত দিন সময় লাগতে পারে? আমি তাকে সাহাবুদ্দীন আহমদ সরকারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলাম।


শুধু নির্বাচনই নয়, সংস্কারের ভিত্তিও স্থাপন করা হয়েছিল সাহাবুদ্দীন আহমদের ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। অধ্যাপক রেহমান সোবহানের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স ১১টি বিষয়ে ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণের সুপারিশ দিয়েছিল তখন।


যদি সাহাবুদ্দীন আহমদ সরকারের তিন মাস সময় লাগে, তাহলে বর্তমান বাস্তবতায় ছয় বা নয় মাস যথেষ্ট হওয়া উচিত। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই সীমা অতিক্রম করেছে বেশ আগে। এখন সংস্কার ও ঐকমত্যের নামে সময়ক্ষেপণ করে চলছে, নির্বাচনের একটা দিনক্ষণ বললেও বৈষম্যবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের বৈষম্য, শোষণ ও সাম্যহীনতার অর্গল ভাঙার অঙ্গীকার নিয়ে কোনো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।


অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্তই যথেষ্ট হতে পারে। যেমন জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ। শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত ৩০ হাজার টাকা। এটি কার্যকর করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক নির্দেশনার বাইরে অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। মুক্তিযুদ্ধের পরেও সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, সেটা কি ১/৪, ১/৫ নাকি ১/৬? আমি তখন ডাকসুর ভিপি হিসেবে সেই আলোচনায় যোগ দিয়েছিলাম। পরে দেখেছি, সেই সবের কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।


অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না করে বৈষম্যবিরোধী অভ্যুত্থানের চেতনার প্রতি সম্মান দেখানো যায় না; বরং দেখা যাচ্ছে, দারিদ্র্য উৎপাদনের যে কাঠামো আগের সরকারগুলো তৈরি করে গেছে, সেটি এখন আরও মজবুত হচ্ছে। সরকারি হিসাবেই দেখা যায়, দরিদ্র মানুষের অনুপাত বেড়েছে। অর্থনীতি যদি লুটপাট ও সম্পদকেন্দ্রিক ধারায় পরিচালিত হয়, তাহলে তার পরিণতি হয় স্বৈরতন্ত্রে এবং তা থেকেই জন্ম নেয় ফ্যাসিবাদী প্রবণতা। যে অর্থনীতি স্বৈরতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখে, সেই অর্থনীতি বজায় রেখে গণতন্ত্রের ফুল ফোটানো সম্ভব নয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও