
শুল্কযুদ্ধের প্রভাব এবং আমাদের কৌশল
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই যে শুল্কযুদ্ধ (ট্যারিফ ওয়ার) শুরু করেছেন, তার ধাক্কা এখন বাংলাদেশের ওপরও এসে পড়েছে। এবারের উচ্চ শুল্কহারের সঙ্গে একটি নতুন ধারণা প্রচারণায় চলে এসেছে, তা হচ্ছে শুল্কযুদ্ধ। এত দিন আমরা শুল্কারোপ তথা উচ্চ শুল্ক ও পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা শুনেছি, কিন্তু এই প্রথম শুল্কযুদ্ধের কথা শুনলাম। এর কারণও আছে।
আগে প্রথমে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে এবং এর প্রভাব দেখে পাল্টা ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আলোচনার মাধ্যমে এই শুল্ক সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এবার ঘটেছে একেবারে উল্টো অবস্থা। উচ্চ শুল্ক আরোপের আগেই শুরু হয়ে গেছে হুমকি-পাল্টাহুমকি।
সাধারণত শুল্কারোপের দিন থেকে কমপক্ষে তিন মাস পরে এসে এর প্রভাব অর্থনীতিতে দেখা যায়। কিন্তু আগেই হুমকি-পাল্টাহুমকির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।
অধিকন্তু এই ধরনের বাণিজ্যিক উত্তেজনা নিরসনে কোনো তরফ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেই। একেবারে কনভেনশনাল যুদ্ধের মতো।
প্রথমে হুংকার-পাল্টাহুংকার দিয়ে যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করা। তারপর আলোচনার সুযোগ পরিহার করে আক্রমণ শুরু করে রীতিমতো যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। ঠিক একই রকম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে আমেরিকার উচ্চ শুল্কারোপ এবং পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে অন্যান্য দেশেরও উচ্চ শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এড়াতে বা বন্ধ করতে জাতিসংঘ যেমন কোনো ভূমিকা রাখতে না পেরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে, ঠিক একই অবস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জাতিসংঘ বলে খ্যাত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন) বেলায়। এই সংস্থাও শুল্কযুদ্ধ থামাতে কোনো রকম পদক্ষেপ নিতে না পেরে নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
এসব কারণেই এবারের শুল্কহারের বিষয়টিকে শুল্কযুদ্ধ বা ট্যারিফ ওয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং এভাবেই প্রচারণা পেয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বিচারে উচ্চ শুল্কহার আরোপ এবং পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে অন্যান্য দেশ একই রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বিশ্বব্যাপী এর মারাত্মক প্রভাব নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞ মহল উদ্বিগ্ন। অনেকে আশঙ্কা করছেন যে এই শুল্কযুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী এক মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। অনেকে পরিস্থিতিকে ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার সঙ্গে তুলনা করছেন। কেননা তখনো এভাবেই উচ্চ শুল্কারোপ, প্রতিটি দেশের বাণিজ্যের রক্ষণশীল অবস্থান এবং একলা চলার নীতি অনুসরণ করায় বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম সংকট দেখা দেয়, যা বিশ্বে তখন এক মহামন্দার সৃষ্টি করে। অনেকেই সে রকম লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন। সে রকম কিছু আলামত তো দৃশ্যমান। এরই মধ্যে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের ব্যাবসায়িক কার্যক্রম সংকুচিত করতে শুরু করেছে। কানাডার বিশাল রিটেইল স্টোর, হাডসন বে বন্ধ হয়ে গেছে। আমেরিকার জনপ্রিয় রিটেইল স্টোর, মেসি এবং জেসি পেনি তাদের অনেকগুলো স্টোর বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। একই অবস্থা গাড়ি প্রস্তুতকারী কম্পানিসহ অন্যান্য খাতেও। এরই মধ্যে ব্যাপক চাকরি হারানোর সংবাদও প্রকাশিত হচ্ছে। আর স্টক মার্কেটের কথা না বলাই ভালো। আমেরিকার অনেক শেয়ারের ব্যাপক দরপতন ঘটেছে এবং ওয়াল স্ট্রিট থেকে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে তিন ট্রিলিয়ন ডলার বাজার মূলধন উধাও হয়েছে। এসবই অর্থনৈতিক মন্দার আলামত।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ট্যারিফ
- শুল্ক আরোপ