
স্ক্যাবিস ও দাদ রোগী বাড়ছে কেন?
স্ক্যাবিস (Scabies) হলো এক ধরনের পরজীবী মাইট (Sarcoptes scabiei) দ্বারা সৃষ্ট ত্বকের সংক্রমণ। স্ক্যাবিসের ইতিহাস অনেক পুরোনো। প্রায় ২,৫০০ বছর আগে এরিস্টটল স্ক্যাবিস মাইট সম্পর্কে প্রথম বর্ণনা করেন। প্রাচীন রোমান চিকিৎসক সেলসাস স্ক্যাবিসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লিখেছিলেন।
আঠারশো শতাব্দীর শেষভাগে ইতালীয় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জোভান্নি কসমো বোনেমো (Giovanni Cosimo Bonomo) স্ক্যাবিসের কারণ হিসেবে Sarcoptes scabiei মাইটকে চিহ্নিত করেন, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এটি বারবার প্রাদুর্ভাব ঘটিয়েছে।
এই ক্ষুদ্র মাইটগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। এরা ত্বকের উপরের স্তরে গর্ত করে এবং সেখানে ডিম পাড়ে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট লালচে দানার মতো ফুসকুড়ি বা ফোসকা দেখা যায়। এতে তীব্র চুলকানি হয়। বিশেষ করে রাতে বা গরম পানির সংস্পর্শে এলে যা অনেক বেড়ে যায়।
সাধারণত আঙুলের ফাঁকে, কব্জিতে, কনুইয়ের ভাঁজে, বগলে, কোমরের চারপাশে, নাভির আশেপাশে এবং যৌনাঙ্গের চারপাশে এই সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। তবে ছোট বাচ্চা এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে মুখ, ঘাড়, হাতের তালু এবং পায়ের তলায়ও দেখা যেতে পারে।
ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস (Crusted Scabies) স্ক্যাবিসের একটি গুরুতর রূপ, যা দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। এতে ত্বকে পুরু, খসখসে আবরণ তৈরি হয় এবং প্রচুর মাইট থাকে।
স্ক্যাবিস চিকিৎসার জন্য সাধারণত কিছু ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা হয় যা মাইট এবং তাদের ডিম মেরে ফেলে। এর মধ্যে পারমেথ্রিন (Permethrin) ৫ শতাংশ ক্রিম সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং কার্যকর ওষুধ। সাধারণত রাতে গোসলের পর ঘাড় থেকে নিচের সব শরীরে লাগানো হয় এবং ৮-১৪ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলা হয়। ৭ দিন পর আবারও একই নিয়মে ব্যবহার করতে হতে পারে।
বেনজাইল বেনজয়েট (Benzyl Benzoate) ২৫ শতাংশ (বড়দের জন্য) বা ১২.৫ শতাংশ (ছোটদের জন্য) লোশন বা ক্রিম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
তবে কিছু ক্ষেত্রে, ওরাল মেডিসিন যেমন আইভারমেক্টিন (Ivermectin) এবং চুলকানি কমানোর জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ ব্যাবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন যা অতিরিক্ত চুলকানির ফলে সৃষ্ট হওয়া ঘা। এ ধরনের ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে।
সংক্রমণের বিস্তার রোধ করতে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড়, তোয়ালে, বিছানার চাদর ইত্যাদি গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং উচ্চ তাপে শুকিয়ে নিতে হবে। সম্ভব হলে রোদে শুকাতে দেওয়া বা ইস্ত্রি করা। যেসব জিনিস ধোয়া সম্ভব নয়, সেগুলো একটি সিল করা ব্যাগে অন্তত ৩-৭ দিন রেখে দিলে মাইটগুলো মারা যাবে। আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য বা ঘনিষ্ঠ যারা সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের সবারই একই সাথে চিকিৎসা করানো জরুরি, কারণ উপসর্গ দেখা না গেলেও তারা আক্রান্ত হতে পারেন।