প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। আন্দোলনের মুখে তা করতে বাধ্য হয়েছিল সরকার। তবে, ২০২৪ সালের জুন মাসে হাই কোর্টের রায়ে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হয়। ওই সিদ্ধান্ত পুনরায় ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে এবং পরে তা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে রূপ নেয়। অনিবার্য পরিণতিতে সরকারেরই পতন ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, যা শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা বাতিলের আন্দোলন ছিল, তাতে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে। তার মানে এ নয় যে, কোটা বিলুপ্তির আন্দোলনটি যখন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়, তখন ওই আন্দোলনে নারীরা ছিলেন। তখনও নারীরা ছিলেন এবং বিগত যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামের তুলনায় অনেক বেশিই ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরুতে নারী আন্দোলনকারীদের অনেকেই সমতার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে নারীদের জন্য বরাদ্দ কোটার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অনেকেই তখন বলছিলেন, “নারীরা তাদের সক্ষমতায় আত্মবিশ্বাসী এবং সহানুভূতির মাধ্যমে নয়, বরং সমতার ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে চান।”
২০২৪ সালের জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সরকারি চাকরিতে নতুন কোটা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়। ওই ব্যবস্থায় ৯৩ শতাংশ পদ মেধার ভিত্তিতে এবং বাকি ৭ শতাংশ বিভিন্ন সংরক্ষিত শ্রেণির জন্য বরাদ্দ করা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামী ও তাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য ১ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়। নারীদের কোটা পুরোই বাতিল করা হয় আদালতে।
ফলে সম্প্রতি ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’-এর যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে, এই খসড়া অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগে নারী, পোষ্য ও পুরুষ কোটা আর থাকছে না। পূর্বে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা এবং ২০ শতাংশ পুরুষ কোটার ভিত্তিতে সম্পন্ন হতো। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগে নারী ও পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত দেশের শিক্ষানীতি ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তার ওপর একটি বড় ধাক্কা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত শুধু নিয়োগ প্রক্রিয়ার একটি ছোটখাটো পরিবর্তন নয়, বরং এটি একটি রাষ্ট্রীয় অবস্থান— যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি দায়বদ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
নারী, জেলা ও আদিবাসী— এই শ্রেণিগুলোর জন্য কোটা বরাদ্দ করা হয়েছিল একটি বিশেষ বাস্তবতা থেকে। সমাজে তাদের কাঠামোগত বঞ্চনা, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা অস্বীকার করার মতো নয়। তাই এই কোটাগুলো ছিল এক ধরনের ‘ইতিবাচক বৈষম্য’, যাতে করে সুযোগসুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।