
রুদ্ধ হতে পারে রাজনীতির পথ
দেখেশুনে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।এর ফলাফল এমন হতে পারে যে রাজনীতি পথ হারিয়েছে, অন্তত কিছুকালের জন্য হলেও এটা ঘটে যেতে পারে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস বেশ কিছুদিন ধরেই বলছিলেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। অবশ্য গতকালই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ডিসেম্বরে স্থির থাকলেন না। বললেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে সংসদ নাকি গণপরিষদ– কোন নির্বাচন হবে তার বক্তব্যে সেটি খোলাসা হয়নি বলে মনে করছেন অনেকেই।সম্ভবত রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের উপর তিনি সেটা ছেড়ে দেবেন। বর্তমানে সক্রিয় রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দল বিএনপি বলছে, আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে গণতান্ত্রিকভাবে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণপরিষদ গঠন করার কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করছে দলটি।
নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলছে, পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সংবিধানসম্পর্কিত সংস্কারগুলো গণপরিষদে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচন মেনে নেবে না তারা । এই দলটি আগে চায় গণপরিষদ। সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তাদের দাবির একটি।
জামায়াতে ইসলামী গণপরিষদ বনাম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন অবধি খুব স্পষ্ট মন্তব্য করেনি। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সরকারকে জাতীয় দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিতে হবে। কি ধরণের নির্বাচন চায় তারা সেটা খোলাসা করে বলেনি এই দলটি।
অন্যান্য দলগুলো কিছুটা টলোমলো, যারা বিএনপির ঘরানার, তারা বিএনপির সঙ্গেই সুর মিলিয়ে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় সংসদ বা গণপরিষদ যে নির্বাচনই হোক না কেন, কারা এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবে, আরো সুক্ষ্মভাবে বলতে গেলে, কারা পারবে না, তা নিয়েও বিতর্ক চলছে। দুৰ্ভাগ্যবশত তর্ক-বিতর্কে সেনাবাহিনীকেও টেনে আনা হয়েছে। আর এই কাজটা করেছেন নবগঠিত রাজনৈতিক এনসিপির দুই নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। এই দুই নেতা জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার কিছুকাল আগেও তারা ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে হাসনাত যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন হাসনাত, সেখানে সারজিস আবার ভিন্নমত প্রকাশ করে বিতর্ককে উসকে দিয়েছেন। এই সব তর্ক-বিতর্কে ঘৃতাহুতি দিয়েছে পঞ্চগড়ে সারজিসের গাড়িবহর নিয়ে শোডাউনের ঘটনা। যে দল নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলছে, সংস্কারে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে, সেই দলের নেতার এমন আচরণ খোদ দলের মধ্যেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এইসব সংস্কারের প্রস্তাব গ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়। যেমন সংস্কারের ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১৩টির সঙ্গে একমত হয়েছে এনসিপি। বাকিগুলো তারা বাতিল করে দিয়েছে ।
বিএনপি যে অস্থায়ী সরকারের অধীনে কোনো সংস্কারই চায় না, তা অনেকভাবে জানিয়ে দিয়েছে । তাদের নেতা তারেক রহমান আট দফা প্রস্তাব করেছেন, যেগুলো নীতিনির্ধারণী বিষয়ক সংস্কার– শিল্প প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন, জিনিসপত্রের দাম কমানো ইত্যাদি।
এখন কি হবে? আপনারা দেখেছেন, যখন রাস্তায় যানবাহন চলাচলের কোনো শৃঙ্খলা থাকে না, তখন গাড়িগুলো সোজাসুজি ডানে-বায়ে, আড়াআড়ি সবদিকে চলতে থাকে, যে যেদিকে যেতে চায়। অন্যদের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার যে প্রবণতা সৃষ্টি হয়, তার কারণে সবারই এগুনো বন্ধ হয়ে যায়। এটাকে বলে ডেডলক বা অচলাবস্থা– মোদ্দা কথায় হ-য-ব-র-ল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- গণপরিষদ নির্বাচন