
ফিলিস্তিনে পশুশক্তির বর্বরতা : মুক্তি কতদূর
এখন পবিত্র রমজান। মুসলমানদের ইবাদতের ফলবতী মৌসুম। সমগ্র পৃথিবী উবু হয়ে আছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক রুহানি প্রচেষ্টায়। কিন্তু এই পবিত্র মাসেও বর্বরতা থেমে নেই ফিলিস্তিনে, গাজায়। ফিলিস্তিনজুড়ে পবিত্র রমজানের মধ্যেই যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে পশুশক্তি ইসরাইল আবারও শুরু করেছে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম গণহত্যা। প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাসের পবিত্র ভূমিতে এ অন্যায় ও হত্যাযজ্ঞ চলছে। বায়তুল মুকাদ্দাস, পৃথিবীর সব শৌর্যবীর্যের ইতিহাস যেখানে স্থির। বায়তুল মুকাদ্দাস ও তার আশপাশের এলাকা তথা সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখণ্ড বহু নবি-রাসূলের স্মৃতিবিজড়িত। আল কুরআনে এ পুরো ভূখণ্ডকে ‘পবিত্র ভূমি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে হাজার হাজার বছর ধরে মসজিদুল আকসা, বায়তুল মুকাদ্দাস ও ফিলিস্তিনের প্রতি ভালোবাসা প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত।
২.
১০৯৬ সাল। ক্রুসেডার খ্রিষ্টানরা সমগ্র সিরিয়া ও ফিলিস্তিন শক্তির জোরে দখল করে নেয়। এরপর বায়তুল মুকাদ্দাসের বিভিন্ন ইসলামি স্থাপনায় পরিবর্তন আনে। প্রায় ১০০ বছর পর উদ্যোগী হন এক অসীম সাহসী লড়াকু নেতা, সালাহউদ্দীন আইয়ুবি। তিনি ১১৮৭ সালে বায়তুল মুকাদ্দাসকে নিপীড়কমুক্ত ও দখলমুক্ত করেন।
১৯৪৮ সালের ১৫ মে ফিলিস্তিনি মুসলমানের ভাগ্যে নেমে আসে দুর্ভোগ। ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর সেখানকার মুসলমানদের ওপর ধারাবাহিকভাবে বিপদ আসতে শুরু করে। সমগ্র পৃথিবীর বিশ্বাসী মুসলমানের হৃদয়ে ক্ষত তৈরি করে এই ইসরাইল। বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশক থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনের ভূমি ও পবিত্র কুদস দখলের পর কঠিন সময় অতিবাহিত হতে থাকে। বিজয়ের নতুন বার্তা নিয়ে আসে ১৯৭৯ সাল। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে পশ্চিমা আধিপত্যবাদ এবং স্বৈরাচার রেজা শাহের মসনদ গুঁড়িয়ে ইরানে সংঘটিত হয় ইসলামি বিপ্লব। এ বিজয় ফিলিস্তিন ইস্যুর পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে। বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী দখলদার ইহুদিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পতাকা উড্ডীন করেন এবং কুদস শরিফ ও ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমির মুক্তির হারিয়ে যাওয়া লক্ষ্য ও আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করেন।
৩.
ইমাম খোমেনীর পক্ষ থেকে রমজান মাসের শেষ দশকের শুক্রবারকে আল কুদস দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি ছিল একটি বৃহৎ বুদ্ধিবৃক্তিক ও গঠনমূলক রাজনৈতিক উদ্যোগ, যা ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের পথকে আলোকিত ও মসৃণ করে তোলে। সেই পথ ধরে আল কুদস কমিটি বাংলাদেশও সোচ্চার হচ্ছে সম্মিলিত প্রতিবাদে এবং নিপীড়নের বিপক্ষে দাঁড়ানোর কর্মতৎপরতায়।
৪.
অনেক জুলুম-নির্যাতন পেরিয়ে আসে ৭ অক্টোবর ২০২৩। ‘আল-আকসা ফ্লাড’ নামে আকস্মিক ওই হামলার প্রয়োজন ছিল অপরিহার্য। হামাস বলেছে, ‘এটি ছিল প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় স্বাভাবিক এক প্রতিক্রিয়া।’ এ হামলার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ পশ্চিমা বিশ্বের মোড়লদের হিসাব-নিকাশ পালটে দেওয়া হয়। একতরফাভাবে ইসরাইলকে সমর্থন করার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সব তৎপরতা প্রায় থমকে যায়। পুরো বিশ্বব্যবস্থায় শক্তির একটি ভারসাম্য তৈরির উপলব্ধি ও প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়। দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায় পৃথিবী। একদল মজলুমের পক্ষে, অন্যটি নিপীড়কের পৃষ্ঠপোষকতায়।
৫.
হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবরের হামলায় শুধু ইসরাইলি সেনা ও সশস্ত্র ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ইসরাইল সরকারের তথ্য অনুযায়ী, হামাসের ওই হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জনের প্রাণ গেছে। হামাসের হামলার জবাবে একই দিন ফিলিস্তিনের গাজায় পালটা হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। দেড় বছর হয়ে গেল, এখনো নির্বিচার হামলা অব্যাহত রয়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় এরই মধ্যে গাজায় লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ গেছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ২০ লাখের বেশি মানুষ।