
‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’- মুক্তির পদধ্বনি
মুক্তিযুদ্ধের তখন শেষ সময়। গ্রামের নারী-পুরুষ এসেছেন মাতব্বরের কাছে। তাদের চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা। মাতব্বর সবাইকে আশ্বাস দিচ্ছেন, কিন্তু গ্রামবাসী মাতব্বরের কথায় আশ্বস্ত হতে পারেন না।
একসময় ঘর থেকে বের হন মাতব্বরের মেয়ে। সবার সামনে বলেন, বাবা জোর করে কলেমা পরিয়ে তাকে ক্যাপ্টেনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। অবাক গ্রামবাসী। আর সেই বীরাঙ্গনা আত্মাহুতি দেন। নিস্তার মেলেনি রাজাকার মাতব্বরেরও। খুন হন তিনি।
এমন পটভূমিতে রচিত ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ নাটকটির মধ্য দিয়ে সত্তরের দশকে বাংলা সাহিত্যে ‘কাব্যনাট্যে’র এক নতুন যাত্রার সূচনা করেছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে লেখা প্রথম কাব্যনাটক সৈয়দ হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’।
পাঠক ও দর্শকের কাছে মুক্তিযুদ্ধের নাটক হিসেবে চিহ্নিত হলেও, এ নাটক একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নাটক হিসেবে রচনা করেননি বলে ‘নাটকের করণকৌশল’ শিরোনামে এক লেখায় জানিয়েছেন সৈয়দ হক।
তার ভাষ্য, “এই নাটকে একাত্তর একটি পরিচিত ও আমাদের প্রত্যেকের জীবন-স্পর্শকারী পটভূমি মাত্র। আমি চেয়েছি মুক্তিযুদ্ধকে পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করে আরো বড় একটি মুক্তির জন্যে দর্শককে প্রাণিত করতে- সে মুক্তিযুদ্ধ ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, ধর্মের নৌকোয় নৈতিক অন্যায়কে পার করিয়ে দেবার যুগযুগান্তরের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।”