সংবিধানে অপ্রয়োজনীয় ও আপত্তিকর সংস্কারের প্রস্তাবাবলি

www.ajkerpatrika.com ড. মইনুল ইসলাম প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৬

অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট ২০২৪ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের পর সংবিধান সংস্কারের জন্য যে কমিশন গঠন করেছিল, তারা গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ওয়েবসাইটে তাদের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন এই কমিশন যখন নভেম্বর মাসে দেশের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে একটি পরামর্শ সভার আয়োজন করেছিল, তখন আমাকেও ওই সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।


আমি সভায় সংবিধান সংস্কারে আমার প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেছিলাম, যেগুলো সবার প্রশংসা অর্জন করেছিল। পরে কমিশনের অনুরোধে আমি আমার প্রস্তাবগুলো লিখিতভাবে কমিশনে পেশ করেছিলাম। একই সঙ্গে প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে রচিত আমার একটি কলামও প্রথম আলোয় ২৫ নভেম্বর ২০২৪ প্রকাশিত হয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই যে আমার প্রস্তাবগুলোর প্রায় সবই কমিশনের প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। যেগুলো কমিশনের প্রস্তাবাবলির মধ্যে স্থান লাভ করেছে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত তালিকা নিচে প্রদত্ত হলো:


সংবিধানের ৭০ ধারা সংশোধন;



  • প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা;

  • নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রস্তাব;

  • পাঁচ বছরের স্থলে চার বছর পরপর সংসদীয়


নির্বাচনের প্রস্তাব;



  • পরপর দুইবারের বেশি কাউকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়া;

  • বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা;

  • দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালু করা;

  • সংসদের উচ্চকক্ষে ১০০টি আসনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করা;

  • সংসদে ১০০ নারী সদস্যের সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করা;

  • কমিশনের সুপারিশগুলোকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গণভোটের ব্যবস্থা চালু করা; এবং

  • পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সংসদের সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংশোধনীগুলোকে অনুসমর্থনের মাধ্যমে আইনগত বৈধতা প্রদান।



কমিশনের ‘ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল’ গঠনের প্রস্তাবটি অত্যন্ত ভালো প্রস্তাব। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে যেসব সাংবিধানিক কমিশন ও কমিটির চেয়ারপারসন ও সদস্য-সদস্যাদের নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে প্রধানমন্ত্রীর খামখেয়ালিপনার মাধ্যমে এসব পদে নিয়োগের স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতির অবসান হয়ে যাবে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় বহুমাত্রিকতার সম্প্রসারণ ঘটবে। (এসব পদের জন্য তদবির সংস্কৃতিরও নিরসন ঘটবে)। একই সঙ্গে, সংসদের দুটি কক্ষেই ডেপুটি স্পিকারের আসনে একজন বিরোধী সদস্য-সদস্যার নির্বাচনের বাধ্যবাধকতার প্রস্তাবটিও অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচকদের সংখ্যার সম্প্রসারণও ভালো প্রস্তাব। আমি মনে করি, কলামে উল্লিখিত ১১টি মূল ক্ষেত্রে কমিশন যে প্রস্তাবাবলি পেশ করেছে, সেগুলো রাজনৈতিক দলগুলো গ্রহণ করলে এ দেশের সংবিধান একটি পুরোপুরি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হবে। আমি কমিশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার প্রস্তাবগুলোকে তাদের সুপারিশমালার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আমি ফোকাস করতে চাই কমিশনের কতগুলো অপ্রয়োজনীয় ও আপত্তিকর সুপারিশের দিকে।


১. প্রথমেই আমি উল্লেখ করব যে আমি সংবিধানের পুনর্লিখনের পক্ষপাতী নই, কারণ ১৯৭২ সালের সংবিধান আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের শাহাদাত এবং ২ লাখ সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের আত্মত্যাগকে ধারণ করে রচিত হয়েছে। কীভাবে সংবিধানে বিভিন্ন একপেশে সংশোধনী সন্নিবেশিত হয়েছে, তা আমি ব্যাখ্যা করেছি। বর্তমান অবয়বে সংবিধানের মারাত্মক ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোকে সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য, যেগুলো আমার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আমি ব্যাখ্যা করেছি। কমিশনও সেগুলো তাদের সুপারিশমালায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চারটি মূলনীতির মধ্যে তিনটিকে বদলে ফেলার যে সুপারিশ কমিশন প্রদান করেছে, সেগুলো একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ও আপত্তিকর। কমিশনকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০ এপ্রিল ১৯৭১ বাংলাদেশের প্রথম সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধের কান্ডারি তাজউদ্দীন আহমদ যে তিনটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা রচনা করে বেতারে ভাষণ দিয়েছিলেন সেগুলো ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। চতুর্থ মূলনীতি বাঙালি জাতীয়তাবাদ অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছানুসারে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি দেশে ফেরার পর। অতএব, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধান থেকে ছুড়ে ফেলার অধিকার আমরা কাউকেই দিতে পারব না, তার কোনো প্রয়োজনও নেই।


২. কমিশনের সুপারিশকৃত ‘বহুত্ববাদ’ নীতির মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা অন্তর্নিহিত রয়েছে বলা হলেও সাধারণ জনগণের সেটা উপলব্ধি করা প্রায় অসম্ভব বলা চলে। তাই আমি এই সুপারিশটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছি, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দেওয়া ঠিক হবে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও