ঠিক-বেঠিক কে ঠিক করবে

প্রথম আলো হাসান ফেরদৌস প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১৭:৫৪

আমার এক ফেসবুক বন্ধু একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন। তাতে দেখছি, ভারিক্কি চেহারার এক ভদ্রলোক বাজারে রমজানের মধ্যে কে কে রোজা রাখার বদলে ধূমপান করছে, তার হিসাব নিচ্ছেন। কাউকে পাওয়া গেলে সবার সামনে কানে হাত দিয়ে ওঠবস করাচ্ছেন।


এটি হয়তো বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা, এর ভিত্তিতে মৌলবাদ আসছে বলে পাগলা ঘণ্টি বাজানো আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে এ ঘটনার যে ধরন রয়েছে, সেটাও অস্বীকার করা যাবে না। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক—কারও কারও মনে তার একটি পূর্বনির্ধারিত ধারণা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এ পূর্বধারণার উৎস ধর্মীয় বিশ্বাস। তাঁদের পূর্বনির্ধারিত ধারণার ব্যতিক্রম দেখলে কেউ কেউ নিজেই বিচারের দায়িত্ব তুলে নিচ্ছেন।


যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী তার চোখে যথেষ্ট শালীন পোশাক না পরায় তাঁকে হেনস্তা করেছে। ব্যাপারটা এখানেই থেমে থাকেনি; আদালত পর্যন্ত গড়ায়। জামিন পেয়ে মুক্ত হলে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে কর্মচারীটি বলে, ‘আমি এমন কী বলেছি!’


উদাহরণ আরও আছে। ঠিক-বেঠিকের পূর্বধারণা প্রয়োগ করে সারা দেশে ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে। বাউলের আখড়ায় হামলা হয়েছে। হামলা হচ্ছে মাজারে। এমনকি ক্লাসে বিজ্ঞান পড়াতে গিয়েও ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে জেলে যেতে হয়েছে হাইস্কুলের শিক্ষককে। ফেসবুকে মন্তব্যের জন্য গ্রেপ্তার হয়েছেন কবি, সাইবার মামলায় পড়েছেন আন্দোলনকর্মী। সবার দাবি, ধর্মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে তাঁরা এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন।


ভয়টা এখানেই। আজকের বাংলাদেশে ধর্মের নামে অন্যের ব্যক্তিগত অধিকারের ওপর এমন আক্রমণের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। এসব ঘটনার কোনোটির সঙ্গেই ধর্ম বা ধর্মাচারের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক রয়েছে মৌলবাদের, যার উৎস ধর্মীয় অনুশাসনের আক্ষরিক ব্যাখ্যার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যে। কাজটা ধর্মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ভেবে যাঁরা অন্যের ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করেন, তাঁরা সবাই যে নিজ ধর্ম বিষয়ে খুব সুপণ্ডিত, এ কথা বলা যাবে না। অথবা নিয়মিত ধর্ম পালন করেন, তা–ও নয়। কিন্তু তাঁদের মাথায় ‘ঠিক-বেঠিকের’ একটা সুনির্দিষ্ট ধারণা অনেক আগে থেকেই গাঁথা রয়েছে।



বার্ট্রান্ড রাসেলের ভাষায়, এসবই শৈশবের শিক্ষা। আপাতত সে তর্কে নাহয় না–ই গেলাম। ব্যক্তিগত আচার-আচরণের মধ্যে তাঁদের এই বিশ্বাস সীমিত হলে এতে ভয়ের কিছু নেই। সমস্যা দেখা দেয় যখন কেউ একক বা দলগতভাবে তাঁদের সেই বিশ্বাস বা ধ্যানধারণা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিপদটা আরও বাড়ে, যখন এ প্রবণতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।


মৌলবাদ যে শুধু আমাদের অঞ্চলে অথবা আমাদের ধর্মের মধ্যে বিস্তৃত, তা মোটেই নয়। বস্তুত মৌলবাদ বা ফান্ডামেন্টালিজম কথাটা আমরা পেয়েছি আমেরিকা থেকে, সেখানে গত শতকের গোড়ার দিকে প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানরা বাইবেলে আদিষ্ট ধর্মের প্রকৃত অনুসারী হিসেবে নিজেদের ‘ফান্ডামেন্টালিস্ট’ হিসেবে ঘোষণা করেন। গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে খ্রিষ্টধর্ম পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে আমেরিকায় যে ‘মোরাল মেজরিটি’ আন্দোলন গড়ে ওঠে, তার সমর্থকেরাও নিজেদের ফান্ডামেন্টালিস্ট হিসেবেই পরিচিত করাতেন।


আজকের আমেরিকায় মোর‍াল মেজরিটির গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছে বটে, কিন্তু ভিন্ন মোড়কে রিপাবলিকান রক্ষণশীল রাজনীতিক ও ধর্মগুরুদের হাতে তা নতুনভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতকায় ভোটারদের প্রায় ২৫ শতাংশ নিজেদের ‘ইভানজেলিক্যাল’—অন্য কথায় মৌলবাদী বলে পরিচয় করাতে ভালোবাসেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে ধর্মাচারী হিসেবে পরিচিত না হলেও এই খ্রিষ্টীয় মৌলবাদীদের সমর্থনেই তিনি দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন।


আগে বলেছি, ব্যক্তিগত জীবনে আপনি যেমন ইচ্ছা ধর্ম পালন করুন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার ধর্মবিশ্বাস যখন রাজনৈতিকভাবে একটি দলীয় বা সম্প্রদায়গত ধর্মবিশ্বাস হয়ে দাঁড়ায়, তখন সেই ধর্মবিশ্বাসের বাইরের মানুষের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা দেখা দেয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও