
এসব স্বাভাবিক রাজনীতি নয়
আমি যে এদেশের নেহাত একজন শাশ্বত মাস্টার সাহেব, এ পরিচয় ইতোমধ্যেই আপনারা জেনে গেছেন। ক্লাসে বিভিন্ন বিষয় আমাকে পড়াতে হয়। এর মধ্যে বিজনেস এথিক্স, প্রফেশনাল এথিক্স, বিভিন্ন পেশার কোড অব কন্ডাক্ট ইত্যাদিও রয়েছে। প্রতিটি পেশার কোড অব কন্ডাক্ট (আচরণবিধি) বা কোড অব এথিক্স পড়াতে গেলেই সেই পেশার জন্য প্রযোজ্য কিছু আলাদা এথিক্স ছাড়াও এজমালি কয়েকটি এথিক্স সব পেশার জন্যই দেখতে পাই। বর্তমান এদেশের বিদ্যমান রাজনীতিকে আমি দেশসেবা, সমাজসেবা, জনসেবা বলতে দ্বিধান্বিত। এদেশে বরং রাজনীতিকে একটা পেশা, ব্যবসা, মিথ্যার বেসাতি, লাঠিয়াল বাহিনীগিরি, লুটতরাজ ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করতে আমরা প্রস্তুত। সব পেশার এথিক্সগুলোর মধ্যে কয়েকটি এথিক্স এজমালি, যেমন-ইন্টিগ্রিটি, পেশাগত যোগ্যতা, বিশ্বস্ততা ও দায়িত্ব, অবজেক্টিভিটি ইত্যাদি।
ইন্টিগ্রিটি শব্দটা ছোট হলেও এর অর্থ ব্যাপক, যেমন-সততা, নৈতিকতা, সাধুতা, ন্যায়পরায়ণতা, অখণ্ডতা, চারিত্রিক বিশুদ্ধতা ইত্যাদি। এসবের ব্যাখ্যা করতে গেলে জায়গা সংকুলান হবে না। শুধু হাতের আঙুলে গুনে দেখতে পারি সামাজিক মূল্যবোধের এ অবক্ষয়ের যুগে ক’জন রাজনীতিকের মধ্যে সততা, নৈতিকতা, বিশুদ্ধতা আছে। অবজেক্টিভিটি অর্থ নৈর্ব্যক্তিকতা, বস্তুনিষ্ঠতা, ব্যক্তিনিরপেক্ষতা ইত্যাদি। এগুলো একজন রাজনীতিকের থাকার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা একটু ভেবে দেখতে পারি। ব্যক্তি-নিরপেক্ষতা, বিশ্বস্ততা ও দায়িত্ববোধই বা ক’জনের মধ্যে বিদ্যমান? এদেশে লাঠিবাজি, মাঠ-দখল ও ভাঁওতাবাজি রাজনীতির পেশাদারত্ব বলে বিবেচিত হয়। আসলে পেশাগত যোগ্যতার মধ্যে সততা, জনকল্যাণকামিতা, সমাজসেবার মানসিকতাকে আমরা রাজনীতিকদের পেশাগত যোগ্যতা হিসাবে গণ্য করতে পারি। এ অর্থে বিশ্বস্ততা ও দায়িত্বশীলতার অর্থও ব্যাপক। একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি অন্য এক বা একাধিক ব্যক্তি-গোষ্ঠীর আস্থা অর্জন করে, অন্যদের অর্থ ও অন্যান্য সম্পদের যত্ন ও জিম্মাদারত্ব করে। এদেশের ‘মহান’, ‘অতিমহান’ ও ‘চিরমহান’ নেতাকর্মীরা জিম্মাদারত্ব কথাটা বুঝেও বুঝতে চায় না, জনগণের সম্পদকে নিজের সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করে। তারাই আবার এমপি নির্বাচনে প্রতিযোগিতাও করে। এজন্যই এদের জন্য কোড অব এথিক্স আইন আকারে বলবৎ করার প্রস্তাব দিতে হয় এবং সংস্কারের এ ভরা মৌসুমে রাজনীতিকদের মধ্যে এসব গুণের সন্নিবেশের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরতে হয়। এসব এখনই ভেবে দেখার সময় এসেছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক দল ছাড়াও বাজারে নতুন দল এসেছে। নতুন দলে পুরোনো দলের দলছাড়া, ডিগবাজি মারা, মুখসর্বস্ব, সুযোগসন্ধানীরা যোগ দেয়নি। এর কারণ রাজনীতি তো ওদের জন্য লাভজনক একটা ব্যবসা। সামাজিক এ অবক্ষয়কে বিবেচনায় আনার জন্য সংস্কারকদের বারবার লিখছি, কাজ হচ্ছে না। তারা কানে দিয়েছে তুলো, পিঠে বেঁধেছে কুলো।