
নতুন দল নতুন কী নিয়ে হাজির হবে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বা গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন একটি দিন বা মাসের ঘটনা নয়। এটা দেশে এক নতুন রাজনীতির আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটিয়েছে। অভ্যুত্থান-পর্ব শেষে এখন সেই নতুন রাজনীতি শুরুর পথে বাংলাদেশ।
গত ছয় মাসের অভিজ্ঞতা অনেকের মনেই হতাশার জন্ম দিতে পারে। কিন্তু নতুন রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা থেকে বাংলাদেশের মানুষ সরে আসেনি। অনেকের মুখেই শুনি এই গণ-অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না, এর ব্যর্থতার ভার বহন করার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই।
বাংলাদেশের বিভিন্ন গণ-আন্দোলন ও অভ্যুত্থানে ছাত্ররা সব সময়েই ছিলেন সামনের সৈনিক। কিন্তু চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান অনন্য। এবার তাঁরা ছিলেন নেতৃত্বে। গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্ররা নতুন রাজনীতি শুরুর দায় নিতে আগ্রহী হয়েছেন। তঁারা অন্তর্বর্তী সরকারে যুক্ত হয়েছেন, এখন নতুন দল করে রাজনীতির মাঠে নেমেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন দল গঠনকে তাই একটি অভাবিত ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বড়সড় সমাবেশ করে ছাত্ররা যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন করেছেন, তার ঘোষণাপত্রে দল গঠনের উদ্দেশ্য ও আদর্শের বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
নতুন দলের ঘোষণার শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘আমরা হাজার বছরের ঐতিহাসিক পরিক্রমায় বঙ্গীয় বদ্বীপের জনগোষ্ঠী হিসেবে এক সমৃদ্ধ ও স্বকীয় সংস্কৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।’
এরপর ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে নতুন সংগ্রাম ও একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দিলেও গণতন্ত্রের জন্য যে জনগণের লড়াই থামেনি, সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ রয়েছে।
বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানও দেশে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মতো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারেনি। আর গত ১৫ বছরে দেশে এমন একটি নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলেছে। এ সময়ে বিরোধী কণ্ঠ দমন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থ পাচার একটি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়।
দল ঘোষণার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে নতুন স্বাধীনতা পাওয়া গেছে, তার উদ্দেশ্য কেবল একটি সরকারের পতন ঘটিয়ে আরেকটি সরকার বসানো নয়। জনগণ এই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছে রাষ্ট্রের আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী-ব্যবস্থা বিলোপ করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা থেকে।
নতুন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঘোষণা করেন, ‘সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিচ্ছি। এটি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল।’