বৈষম্যহীন বাংলাদেশ জিন্দাবাদ

কালের কণ্ঠ মোফাজ্জল করিম প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৯

আজ পয়লা মার্চ। অনেক সুখ-দুঃখবিজড়িত মার্চ মাসের প্রথম দিন। এই মাসের ২৫ তারিখ রাতে পাক বাহিনী নির্বিচারে বাঙালি নিধন শুরু করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ)। সেটা ছিল ১৯৭১ সাল।

এক রাতেই নিরীহ নিরস্ত্র শত-সহস্র মানুষকে হত্যা করে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কালিমালিপ্ত অধ্যায় রচনা করে তারা। ওই কালরাত্রি থেকেই শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ, ৯ মাস পরে যার সমাপ্তিতে ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (সেই আমলে যেটা পরিচিত ছিল রেসকোর্স ময়দান নামে) ১৬ ডিসেম্বর অপরাহ্নে হানাদার বাহিনী পরাজয় মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। সেই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে রক্তের অক্ষরে লিখিত আছে বিজয় দিবস হিসেবে।


আর ২৫ মার্চের কালরাত্রির পরপরই ঘোষিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সেই থেকে ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস।


একাত্তরে আমার বয়স ছিল তিরিশ। সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তানের (সিএসপি) সদস্য হিসেবে আমি এবং আমাদের ১৯৬৬ ব্যাচের সবাই যুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত ছিলাম।

আমি ছিলাম মণ্ডি বাহাউদ্দিন নামের পাঞ্জাব প্রদেশের একটি মহকুমার মহকুমা প্রশাসক। গুজরাত জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত ওই মহকুমার এক শ-সোয়া শ মাইলের মধ্যে আমি এবং সম্প্রতি প্রয়াত আমার ব্যাচমেট ড. শওকত আলী ছাড়া আর কোনো বাঙালি ছিল না। শওকত ছিল পার্শ্ববর্তী ঝিলাম জেলার পিন্ড্ দাদন খান মহকুমার মহকুমা প্রশাসক।


জুন ’৭১-এ সরকার আমাদের ব্যাচের সবাইকে ফেরত পাঠাল পূর্ব পাকিস্তানে। ১৬ জুলাই তারিখে আমি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে যোগদান করলাম আমার প্রিয় জেলা কুমিল্লায়।




প্রিয় কারণ আমি ছাত্রজীবনে ইন্টারমিডিয়েট পড়েছি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে, থাকতাম নিউ হোস্টেলে। আর সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর এসডিও ছিলাম কুমিল্লা জেলারই ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমায়। ওখান থেকেই যাই পশ্চিম পাকিস্তানে। কাজেই কুমিল্লা জেলা তো আমার প্রিয় জেলা ছিল বটেই।


তবে জুলাই ’৭১-এ সীমান্তবর্তী জেলা কুমিল্লায় গিয়ে, বিশেষ করে কুমিল্লা শহরের এক প্রান্তে অবস্থিত ক্যান্টনমেন্টের কারণে আমার কুমিল্লা পোস্টিংয়ে পুলকিত হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। কুমিল্লা শহরের মধ্যিখানে অবস্থিত সুদৃশ্য সার্কিট হাউসের দ্বিতল ভবনটি মিলিটারি দখল করে নিয়ে তাদের ওই অঞ্চলের হেডকোয়ার্টার্স বানায়। তাদের নেতা ছিলেন ব্রিগেডিয়ার আতিফ। হ্যাঁ, ইনিই সেই ১৯৬৪ অলিম্পিকে বিজয়ী পাকিস্তানি হকি দলের ক্যাপ্টেন আতিফ, যিনি সারা জেলায় অপারেশন চালাতেন হকি খেলার সময় গোলমুখের আনন্দমিশ্রিত উত্তেজনা নিয়ে। আমি, আমার ‘বস’ জেলা প্রশাসক নূরুন্নবী চৌধুরী ও পুলিশ সুপার এ এস এম শাহজাহান (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছিল আমার সতীর্থ) যথাসম্ভব গা বাঁচিয়ে তাঁকে নিরস্ত করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু বৃথা সে চেষ্টা। ‘ধর্মের কাহিনি’ শোনার কোনো আগ্রহ ছিল না ব্রিগেডিয়ার সাহেবের। এই কুমিল্লা জেলায়ই ডিসি নূরুন্নবী সাহেব ও এসপি শাহজাহানের পূর্বসূরিদের যুদ্ধের প্রথম দিকে একদিন মিটিংয়ের নাম করে ক্যান্টনমেন্টে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা গেলেন। কিন্তু ওটাই হলো তাঁদের অগস্ত্য যাত্রা। হায়রে! এই দুই সুযোগ্য সহকর্মীর লাশটাও পাওয়া যায়নি।


সূচনাপর্বে পাক বাহিনীর নৃশংসতার কিঞ্চিৎ বাখান উল্লেখ করার কারণ হলো একাত্তরের বিভীষিকাময় দিনগুলো যাঁরা প্রত্যক্ষ করেননি, তাঁদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া এ দেশের প্রত্যেক নাগরিক কী ভয়ংকর সময় পার করেছিলেন ওই সময়, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের যাঁরা এখন রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, যাঁরা একাত্তর দেখেননি, তাঁদের জানা উচিত ওই সময় তাঁদের পিতা-পিতামহরা কী করে হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত পার করতেন। আর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অসম যুদ্ধে এ দেশের তরুণরা কী করে লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে মদোন্মত্ত হানাদার বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে।


১৯৪৭-এ দেশভাগ হয়ে জন্ম হলো পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রের। পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান নাগরিকরা মহাখুশি পাকিস্তানে যোগ দিতে পারায়। ব্রিটিশ আমলে (১৭৫৭-১৯৪৭) তারা তাদের ইংরেজ প্রভুদের কাছ থেকে পেয়েছে বিমাতাসুলভ আচরণ। কারণ তারা ছিল ইংরেজদের পূর্বসূরি মুসলিম শাসক মোগল-পাঠানদের স্বজাতি এবং ইংরেজদের শিক্ষাদীক্ষা-সংস্কৃতি-ভাষার প্রতি ছিল তাদের অনীহা। তারা ইংরেজদের ভাষা-সংস্কৃতিকে মনে করত অনৈসলামিক। পক্ষান্তরে এই উপমহাদেশে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ সনাতনধর্মীরা মুসলিম শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তে ইংরেজদের প্রভু হিসেবে পেয়ে খুশিই হলো। তারা ইংরেজ শাসকদের মনোরঞ্জন করে চলে তাদের ভাষা-সংস্কৃতি দ্রুত গ্রহণ করে নিল। ফলে সনাতনধর্মীরা ইংরেজ শাসকদের কাছ থেকে নানা রকম অনুকম্পা পেতে থাকল এবং তাদেরই প্রতিবেশী ভারতীয় মুসলমানরা ক্রমেই দূরে সরে যেতে লাগল। তারা হয়ে পড়ল সব ধরনের বৈষম্যের শিকার।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও