
মণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসনে কি শান্তি ফিরবে
মণিপুরে অবশেষে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলো। এই নিয়ে ১১ বার ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হলো। অর্থাৎ নির্বাচিত সরকার ব্যর্থ হওয়ায় রাজ্য সরাসরি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে গেল। মণিপুরে শেষ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছিল ২০০১ সালের ২ জুন। এই শাসন ২৭৭ দিন স্থায়ী হয়েছিল।
গত বছরের মে মাস থেকে চলা সহিংসতার জেরে আড়াই শর বেশি মানুষ মারা গেছেন মণিপুরে, গৃহহীন হয়েছেন ৬০ হাজারের মতো মানুষ। এরই জেরে পদত্যাগ করতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংকে। রাজ্যে জারি হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসন।
মেইতেই সমাজের প্রতিক্রিয়া
বীরেন সিংয়ের পদত্যাগ এবং তার এক সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়েও মতবিরোধ চলছে। রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সমাজের প্রতিনিধিরা প্রথম আলোকে জানান, সিংকে সরিয়ে দিলেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে মেইতেই সমাজের একটা বড় অংশ এখনো মনে করে, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সাংবিধানিক দায়িত্বের ঊর্ধ্বে উঠে তাঁর নিজের সমাজ, অর্থাৎ মেইতেইদের জন্য কাজ করেছিলেন।
সে কারণে তিনি তাঁর সমাজে এখনো জনপ্রিয়, যদিও দলের মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে একটা গোষ্ঠী কাজ করেছে। যেমন, বিধানসভায় বিজেপির স্পিকার থোকচম সত্যব্রত সিং বা মণিপুরের গ্রামীণ উন্নয়ন ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী ইউমনাম খেমচাঁদ সিং মুখ্যমন্ত্রীর কট্টর সমালোচক ছিলেন।
বিজেপির এই দুই নেতা মেইতেই সমাজের হলেও সিংয়ের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন। বিশেষ করে সিংয়ের পদত্যাগের প্রধান কারিগর হিসেবে থোকচম সত্যব্রত সিংকে দেখা হচ্ছে। কারণ, বীরেন সিং-বিরোধী গোষ্ঠীর এই নেতা জানিয়েছিলেন যে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনলে স্পিকার হিসেবে তিনি তাতে বাধা দেবেন না। অর্থাৎ অনাস্থা প্রস্তাব আনতে দেবেন। আর এ ছাড়া বিজেপির কুকি এমএলএসহ অন্যান্য আদিবাসী এমএলএ আগেই বীরেন সিংয়ের বিরোধিতা করেছিলেন।
তবে গোটা মেইতেই সমাজই যে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চলে গেছে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই বলে প্রথম আলোকে শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেইতেই সমাজের এক গবেষক-অধ্যাপক, যিনি পুরো সমস্যাটিকে তাঁর মতো করে বিশ্লেষণ করেছেন।
প্রথম আলোকে ওই গবেষক জানান, পুরো মেইতেই সমাজ সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়। (সরকারের) নিষ্ক্রিয়তায় তারা অসন্তুষ্ট ঠিকই, কিন্তু তারা জানে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। এটা বিরোধীরা এবং ভিন্নমতাবলম্বীরা (দলের মধ্যে বিক্ষুব্ধরা) যারা মুখ্যমন্ত্রীকে উৎখাত করতে চায় এবং ক্ষমতা দখল করতে চায়, তাদের একটা পরিকল্পনা। বিরোধীরা নতুন করে জনসংযোগ করতে চায়, যাতে তারা নতুন নির্বাচনে লড়ার একটা সুযোগ পায়।
অর্থাৎ পদত্যাগ করা মানেই যে বীরেন সিংয়ের রাজনৈতিক জীবন এখানে শেষ হয়ে যাচ্ছে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এই বিজেপিই তাঁকে ভবিষ্যতে ফিরিয়ে আনতে পারে বা আবার নতুন করে নির্বাচনে জিতে ফিরে আসতে পারেন সিং। কারণ, সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সমাজের মধ্যে তাঁর একটা ভালো প্রভাব রয়ে গেছে বা বলা যেতে পারে যে তাঁর জনপ্রিয়তা মেইতেইদের মধ্যে বেড়েছে, কুকিদের মধ্যে কমলেও।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাষ্ট্রপতি শাসন