চীনের সেঞ্চুরি এগ ও আমাদের ডিম

www.ajkerpatrika.com শাইখ সিরাজ প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৭

বিশ্বের যত রাষ্ট্র তার ঐতিহ্যকে সম্পদে রূপান্তর করেছে, চীন এর অন্যতম। দেশটি তার ঐতিহ্যকে শুধু ধারণই করেনি, পৃথিবীব্যাপী সেই ঐতিহ্যের বাণিজ্যিক রূপ ছড়িয়ে দিয়েছে। সেঞ্চুরি এগ চীনের পুরোনো ঐতিহ্যের একটি। আগের দিনে এটিকে ডিম সংরক্ষণের একটি উপায় হিসেবে গ্রহণ করলেও এখন স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের চাহিদায় পরিণত হয়েছে সেঞ্চুরি এগ। চীন তো বটেই, এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে চীনের বাইরেও।


গত বছর মে মাসে আমার সুযোগ হয়েছিল চীনের গোয়াংডং প্রদেশের কাইপিং পোলট্রিশিল্প এলাকা ঘুরে দেখার। এক রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে গোয়াংজু শহর থেকে যাত্রা শুরু করলাম। সঙ্গে ছিলেন আমার সহকর্মী তানভীর আশিক, রাসেল শাহ এবং আমাদের সহযোগী চীনের মেয়ে আলবা। আলবা চমৎকার একটি মেয়ে। বাংলাদেশি একজনকে বিয়ে করেছে সে। ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারে। আমাদের দোভাষী হিসেবে কাজ করছিল সে। আলবা বলল, ‘চীনে সেঞ্চুরি এগ খুব জনপ্রিয়। বিশেষ করে পুষ্টি বিবেচনায় তরুণেরা সেঞ্চুরি এগ খুব পছন্দ করে। আপনাদের নিয়ে যাচ্ছি চীনের সবচেয়ে বড় সেঞ্চুরি এগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানটির নাম শুরি এগস প্রোডাক্টস কোম্পানি।’


চীনের রাস্তাঘাট খুবই সুন্দর। পাহাড়ি এলাকা অতিক্রম করে আমরা ছুটছিলাম। চীন উন্নত হয়েছে কিন্তু পরিবেশ সুরক্ষায় তারা বেশ সচেতন। ফলে রাস্তার দুই পাশেই সবুজের সমারোহ। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আমরা পৌঁছালাম সেখানকার সবচেয়ে বড় সেঞ্চুরি এগ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান শুরি এগস প্রোডাক্টস কোম্পানিতে। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মিস উয়া এবং ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সদস্য মিস ট্রেসি আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার পর প্রজেক্টরে ভিডিওচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে তাঁদের কোম্পানি সম্পর্কে ধারণা দিলেন। প্রতিষ্ঠানটি বেশ গোছানো ও আধুনিক। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অংশের স্পষ্ট ধারণা দিলেন তাঁরা। কোথায় কোন ধরনের কাজ হচ্ছে সে সম্পর্কেও ধারণা দিলেন মিস উয়া।



মিস উয়া আমাদের জানালেন চীনে কীভাবে শুরু হয়েছিল সেঞ্চুরি ডিমের ব্যবহার। সে অনেক আগের কথা। চীন তখন মিং সাম্রাজ্যের আওতায়। সে সময় এক কৃষক চা-পাতা সেদ্ধ করা পানি ফেলে দিয়েছিলেন গাদা করে রাখা ছাইয়ের ওপর। সেখানে এক হাঁস দুটি ডিম পেড়ে যায়। ছাইয়ের সঙ্গে চা-পাতার পানি মিশে ডিম দুটি মাখামাখি হয়ে সেখানেই রয়ে যায় বেশ কিছু দিন। মাস তিনেক পর কৃষক যখন ছাই পরিষ্কার করতে যান, আবিষ্কার করেন হাঁসের ডিম দুটিকে। দেখেন যে ডিম দুটি তখনো তাজা। ডিমের খোসা ছাড়িয়ে ভেতরটা দেখে বিস্মিত হন কৃষক। দারুণ এক ব্যাপার। এক ভিন্ন রকমের ডিম। স্বাদও পাল্টে গেছে। আর বহুদিন ডিম সংরক্ষণ করার জন্য তাঁরা এই পদ্ধতিটিই ব্যবহার করতে শেখেন। কথিত আছে, এভাবেই শুরু হয় সেঞ্চুরি এগ তৈরি। ধারণা করা হতো এভাবে সংরক্ষণ করলে ডিম ১০০ বছর পর্যন্ত খাওয়ার উপযোগী থাকে।


মিস উয়ার কথা শুনতে শুনতে আমরা এগিয়ে গেলাম তাঁদের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রের দিকে। মিস ট্রেসি ব্যাখ্যা করলেন কীভাবে সেঞ্চুরি ডিম প্রক্রিয়াজাত করা হয়, সে বিষয়টি।
সেঞ্চুরি ডিম তৈরিতে সাধারণত হাঁসের ডিম ব্যবহার করা হয়, তবে মুরগি বা কোয়েলের ডিমও ব্যবহার করা যায়। প্রথমে চুন (ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড), ছাই, লবণ, চা-পাতা, চালের তুষ বা কাদা দিয়ে ঘন পেস্ট বা মিশ্রণ তৈরি করা হয়। প্রতিটি ডিম মিশ্রণে ডুবিয়ে পুরোপুরি মোড়ানো হয়, যাতে ডিমের খোলস সম্পূর্ণরূপে ঢেকে যায়। মোড়ানো ডিমগুলোকে একটি বায়ুরোধী পাত্রে রাখা হয়। এভাবেই ডিমকে সাধারণত দুই থেকে ছয় সপ্তাহ বা কখনো কখনো কয়েক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়। এই সময়ে ক্ষারীয় মিশ্রণটি ডিমের ভেতরে প্রবেশ করে এবং ডিমের প্রোটিন ও ফ্যাটকে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তন করে। নির্দিষ্ট সময় পরে ডিমের সাদা অংশটি একটি জেলির মতো হয়ে যায় এবং গাঢ় বাদামি বা কালো রং ধারণ করে। আর ডিমের কুসুমটি ক্রিমি এবং সবুজ-ধূসর রঙের হয়। সংরক্ষণের সময় শেষ হলে, ডিমগুলোকে মিশ্রণ থেকে বের করে খোলস পরিষ্কার করা হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও