![](https://media.priyo.com/img/500x/https://media.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2020-10%2F1029114c-37fd-4c36-a816-595983984828%2Feditorial_5.png?rect=0%2C0%2C1600%2C1067&w=622&auto=format%2Ccompress&fmt=avif)
বিশ্বজুড়ে পর্নোগ্রাফি সংগ্রহ, সরবরাহ ও বিপণনের বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে অসচেতনতা ও অসতর্কতার কারণে এর বড় শিকার হচ্ছে অল্পবয়সীরা। শুধু তা–ই নয়, এসব প্ল্যাটফর্মে অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিদের প্ররোচনায় পড়ে অনেকের জীবনে নেমে আসছে কালো অধ্যায়। ভুক্তভোগীর পরিবার হচ্ছে সামাজিকভাবে অপদস্থ। এর ফলে নতুন এক সামাজিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
ফেসবুক, টিকটকসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে পড়াশোনায় ব্যাঘাত, মানসিক অস্থিরতা ও অপরাধপ্রবণতা কিশোর–কিশোরী উভয়কেই আক্রান্ত করছে ঠিকই, কিন্তু কিশোরীরা আলাদাভাবে শিকার হওয়ার বিষয়টি গুরুতর। কারণ, এর সঙ্গে যৌন সহিংসতা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিষয়টি যুক্ত হয়ে পড়ে। এসব প্ল্যাটফর্মে অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তুই থাকে নারীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সব বয়সী নারীই যৌন হয়রানির শিকার হন, তবে অল্পবয়সীদের সহজে ফাঁদে ফেলানো যায় এবং এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি ও অধিক নেতিবাচক। ভুক্তভোগীদের ভবিষ্যৎ জীবনও বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা শহরে দুটি ঘটনা ঘটে। একটি ঘটনায় হাতিরঝিলে ১৭ বছরের একজন কিশোরীর লাশ উদ্ধার হয়। আরেকটি ঘটনা হচ্ছে মোহাম্মদপুর থেকে ১১ বছর বয়সী এক কিশোরী ‘নিখোঁজ’ হয়। দ্বিতীয় কিশোরীও প্রথম কিশোরীর মতো ভয়াবহতার শিকার হলো কি না, এমন আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। তবে সৌভাগ্যক্রমে তাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়। উদ্ধারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়েটি ও তার পরিবার ঘৃণা–বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের মুখে পড়ে। ন্যূনতম নীতিনৈতিকতা ও আইন অনুসরণ না করে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও সংবাদ পরিবেশন করা হয়, যা অভিভাবকদের মধ্যে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার ভয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হওয়া অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিদের প্ররোচনায় এই দুই কিশোরী মূলত ঘর ছেড়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ ধরনের অনেক ঘটনা সংবাদমাধ্যমগুলোয় উঠে এসেছে। ফলে বিশেষজ্ঞরা বারবার পারিবারিক সচেতনতার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। পরিবারে প্রাপ্তবয়স্কদের স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সংযমী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। কারণ, বড়দের কারণে অল্পবয়সীরা এতে প্রভাবিত হয়ে থাকে। অল্পবয়সীদের কাছে স্মার্টফোন বা অন্যান্য গ্যাজেট সহজলভ্য হয়ে যাওয়াটা এখানে বড় ঝুঁকি তৈরি করে। সন্তানের পড়াশোনার জন্য স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে অল্পবয়সীদের দূরে রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাদের নিয়মিত সময় দেওয়া, তাদের সঙ্গে মেশা ও গল্প করা। সচেতনতা বৃদ্ধিতে শিক্ষক ও গণমাধ্যমের ভূমিকাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এসব ঘটনার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকেও হতে হবে সতর্ক। ভুক্তভোগীদের সহায়তা ও অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের তৎপরতা বাড়াবে এবং পদক্ষেপ গ্রহণে আরও আন্তরিক ও কৌশলী হবে, সেটিই কাম্য।