
অর্থ বুঝে কোরআন পড়া ও বিশ্লেষণের গুরুত্ব
আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, তিনিই সব সত্য জ্ঞানের মূল উৎস। জ্ঞানের অন্যতম মাধ্যম বা বাহন হলো গ্রন্থ। কোনো ব্যক্তিকে মুসলমান হতে হলে প্রাথমিক যে সাতটি বিষয়ে বিশ্বাস করতে হয়, তার অন্যতম হলো ‘কিতাব’–এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। কিতাব মানে বই বা গ্রন্থ। শত সহিফা ও চারটি কিতাবের মধ্যে কোরআন হলো সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি গ্রন্থ।
আল্লাহর পাক কালাম বা পবিত্র বাণী কোরআন কারিম। কোরআন অধ্যয়ন বা গবেষণা ও তিলাওয়াত দুটি স্বতন্ত্র ইবাদত এবং একটি অন্যটির পরিপূরক বা সহায়ক। কোরআনে কারিমে অবতীর্ণ প্রথম সুরার প্রথম আয়াতের প্রথম শব্দেই পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ১)
কোরআন তিলাওয়াত করা আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন করার মতোই। ‘দয়াময় আল্লাহ কোরআন শেখানোর নিমিত্তে মানব সৃষ্টি করলেন, তাকে ভাব প্রকাশ শেখালেন।’ (সুরা-৫৫ রহমান, আয়াত: ১-৪)
হাদিস শরিফে বলা আছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যিনি কোরআন মাজিদ শিক্ষা করেন এবং শিক্ষা দেন।’ (বুখারি ও মুসলিম) ‘কোরআনওয়ালাই আল্লাহওয়ালা এবং আল্লাহর বিশেষ আপন–স্বজন।’ (বুখারি)
কোরআন তিলাওয়াত, অধ্যয়ন ও অনুশীলন থেকে বঞ্চিতদের সম্পর্কে হাদিস শরিফে আছে, ‘যার অন্তরে কোরআন নেই, সে যেন পরিত্যক্ত বাড়ি।’ (তিরমিজি) কোরআনকে যারা দূরে সরিয়ে রেখেছিল বা কোরআন থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, তাদের প্রসঙ্গে কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(বিচারের দিনে) রাসুল (সা.) বলবেন, “হে আমার রব! নিশ্চয় আমার জাতি এই কোরআনকে পরিত্যাগ করেছিল।”’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৩০)
কোরআনের রয়েছে মানব ইতিহাসের আদি উৎস, সৃষ্টিতত্ত্ব, প্রকৃতির বিবর্তন ও সমাজ পরিবর্তনের ক্রমিক বিবরণ। স্বজনের প্রতি ভালোবাসা, প্রেম-প্রণয়, দাম্পত্য ও পারিবারিক উপাখ্যান, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রনীতি ও দর্শন। এতে আছে মনস্তত্ত্ব, অপরাধবিজ্ঞান, মানবাধিকার, দায়িত্বজ্ঞান, কর্তব্যপালনে সচেতন করাসহ জীবনের সব বিষয়।
যাঁরা কোরআন শুধু তিলাওয়াত করে যাচ্ছেন, তা বোঝার ও আমল করার চেষ্টা করছেন না; তাঁদের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যাদের তাওরাত কিতাব বহনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা তা প্রকৃতরূপে বহন করেনি। তাদের দৃষ্টান্ত ওই গর্দভতুল্য যে পুস্তক বোঝা বহন করে (কিন্তু তা অনুধাবন ও অনুসরণ করে না)।’ (সুরা-৬২ জুমুআ, আয়াত: ৫)