বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কিছু কথা
বাংলাদেশে কি এখন কোনো রাজনৈতিক নেতা আছেন? নেতার বৈশিষ্ট্য কী? শুধু ক্ষমতালিপ্সার চরিতার্থতা আর নানা কৌশলে রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে একান্ত ভোগবাদী ও সুবিধাবাদী চিন্তা-চেতনা নিয়ে অনুচিত ও অবৈধ উপায়ে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পত্তির মালিক হওয়া—এটাই কি নেতার মূল বৈশিষ্ট্য? যাঁরা ১৯৭২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরা ক্ষমতায় থেকে কী রকম রাজনৈতিক চরিত্রের পরিচয় দিয়েছেন? ক্ষমতার বাইরে থাকাকালে তাঁরা কেমন ছিলেন? বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আত্মজিজ্ঞাসার, আত্মসমালোচনার ও আত্মশুদ্ধির কোনো অনুশীলনের তথ্য তো খুঁজে পাওয়া যায় না। কোনো শিক্ষা ছাড়া, অনুশীলন ছাড়া আপনিতেই কি রাজনৈতিক নেতা হওয়া যায়?
মানুষ কি জন্মগতভাবেই ভালো? মানুষ কি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ভালো কাজ করে? মনুষ্যত্ব, মানবতা, মানুষের স্বরূপ বা মানবপ্রকৃতি কেমন? রাজনৈতিক নেতাদের স্বভাবই বা কেমন? সবই কি জন্মগত? স্বতঃস্ফূর্ত? রাজনীতির প্রকৃতি ও সর্বজনীন কল্যাণ সম্পর্কে এ ধরনের প্রশ্নাবলির উত্তরও সন্ধান করা একান্ত দরকার। বাংলাদেশে রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে যা কিছু বলা হচ্ছে এবং করা হচ্ছে, তা প্রায়ই সর্বসাধারণের জন্য কল্যাণকর নয়। রাজনীতিকে সর্বসাধারণের জন্য কল্যাণকর করে তুলতে হলে এ ধরনের মৌলিক প্রশ্নাবলির উত্তর সন্ধান করে চিন্তার ও কাজের প্রকৃতি বদলাতে হবে এবং উন্নততর নতুন চিন্তা ও নতুন কাজের ধারা সৃষ্টি করতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতি রাষ্ট্রের ভেতরকার রাজনৈতিক নেতাদের ও রাজনৈতিক দলগুলোর আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে। রাষ্ট্রে সামরিক আইন জারি হলে, জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন হলে রাজনীতিবিদরা এবং রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের রাজনীতিকে নিজেদের আয়ত্তের মধ্যে রাখতে পারেন না। যত সময় যায় ততই বোঝা যায় যে রাষ্ট্রের রাজনীতি নানাভাবে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলোর আয়ত্তে চলে যায়। উপনিবেশায়নের এই পদ্ধতিই বাংলাদেশে এখন প্রচলিত রয়েছে।
অত্যুন্নত বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক দিক দিয়ে মানবপ্রজাতি আজ এই ধারায় চলছে। এর মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে রাজনীতি এখন যে রূপ ও প্রকৃতি নিয়ে চলছে, তাতে রাষ্ট্র ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। দেশে কৃষি উৎপাদন বেড়েছে, গ্যাস, তেল, কয়লা ইত্যাদি খনিজ সম্পদ আছে।
কিন্তু মনের দিক দিয়ে, নৈতিক দিক দিয়ে মানুষের কোনো উন্নতি হয়নি। তার ফলে সমস্যাগুলো সংকটে রূপ নিচ্ছে। অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশে এখন একটা সম্ভাবনাময় ক্রান্তিকাল চলছে। এ অবস্থায় যুগান্তরের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে।
করোনাভাইরাস, ডেঙ্গুর প্রকোপ, যুদ্ধ ইত্যাদির ফলে দুনিয়াব্যাপী দরিদ্র মানুষ কোনোক্রমে বেঁচে আছে।
নারী-নির্যাতন, হত্যা-আত্মহত্যা বেড়ে চলছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে গতরখাটা মানুষ এবং নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষেরা নিদারুণ কষ্টের মধ্যে আছে। এভাবেই কি চলবে? না, এভাবে চলবে না। পরিবর্তন অনিবার্য। চাই শুভকর পরিবর্তন।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারের কথা প্রচার করা হচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে ভারতের আগরতলায় পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারের কথাটা বড় করে বলা হচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতা সংস্কারের কথার সূত্রপাত করেননি। দেশের কোনো বুদ্ধিজীবীও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা পরিচ্ছন্নভাবে সামনে আনেননি। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অরাজনৈতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের থেকে কথাটা সামনে এসেছে বা আনা হয়েছে। ছাত্র-তরুণদের আন্দোলনের মধ্যে আত্মরক্ষার আন্তরিক তাগিদবশে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করেন। এই ঘটনা শুধু আওয়ামী লীগেরই নয়, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বিভিন্ন বামপন্থী দল, বিভিন্ন ইসলামী দল—সবারই চরম ব্যর্থতার পরিচায়ক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা এবং রাজনৈতিক দলগুলো এখন যে দুরবস্থায় নিপতিত, তা থেকে তাদের উত্থান মামুলি ধারার রাজনীতি দ্বারা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। অরাজনৈতিক নির্দলীয়-নিরপেক্ষ বিশিষ্ট নাগরিকরা শুধু জাতীয় সংসদের নির্বাচন সম্পন্ন করেই ক্ষমতা ছেড়ে যাবেন কেন? এ রকম প্রশ্ন সারা দেশেই কিছু লোকের আড্ডায়, খোশ-আলাপে তর্ক-বিতর্কে দেখা দেয় বলে শোনা যায়। এটা কি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার?
- ট্যাগ:
- মতামত
- বাংলাদেশের রাজনীতি