রাখাইন প্রশ্নে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে

যুগান্তর ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৮

মিয়ানমারের আরাকান আর্মি রাখাইন জনগণের স্বার্থ রক্ষা নিশ্চিতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় ক্ষমতা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিকল্প প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করেছে এবং সশস্ত্র সংগ্রামের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, প্রশাসন, শিক্ষা ও পুনর্গঠন ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রাখাইনের আপাত দখল নেওয়ার পর আরাকান আর্মি বর্তমান পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং সেজন্য তারা রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার নীতি মেনে আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে। মিয়ানমার জান্তা রাজনৈতিকভাবে এ সংকটের সমাধান না করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সামরিকভাবে এ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে গেলে রাখাইনে আরও ধ্বংস ও মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। রাখাইনের পরিস্থিতির অবনতি হলে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও রাখাইনে মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে।


রাখাইন রাজ্য ভূ-কৌশলগত ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে মিয়ানমার জান্তা রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মির কাছ থেকে আবারও দখলের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির অংশ হিসাবে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন, স্থলভাগে সৈন্য সমাবেশ এবং বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান দিয়েও ব্যাপক আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। রাজনৈতিকভাবে এ সংকটের সমাধান না করে জান্তা আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপক ও দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে; ফলে বহু প্রাণহানি ও মানবিক সংকট সৃষ্টি হবে।


মিয়ানমারের বিমানবাহিনীতে ১০ জানুয়ারি রাশিয়ার ৬টি সুখোই বিমানের উন্নত সংস্করণ এসইউ-৩০ এসএমই যুদ্ধবিমান যুক্ত হয়েছে। মিয়ানমার জান্তা বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে তাদের বিমান সক্ষমতা জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জান্তা তাদের যুদ্ধকৌশলেও পরিবর্তন এনেছে এবং বিদ্রোহীদের ওপর আক্রমণে চীন ও রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত ড্রোন আর জ্যামার ব্যবহার শুরু করেছে। আরাকান আর্মিকে দুর্বল করতে মিয়ানমার জান্তা এ যুদ্ধবিমানগুলো ব্যবহার করতে পারে; এর পাশাপাশি আরাকান আর্মির ক্যাম্পগুলো ধ্বংস করতে তারা ড্রোন হামলাও চালাতে পারে। রাখাইনে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে এগুলো ব্যবহার করা হলে সংঘর্ষের তীব্রতা বাড়বে এবং তা দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে পরিণত হবে।



রাখাইনে যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশ বেশকিছু সমস্যার সম্মুখীন হবে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পারলে এবার আরাকান আর্মির সদস্যরাও বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। এর আগেও আরাকান আর্মির আক্রমণে টিকতে না পেরে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। মিয়ানমার আর্মির পালটা আক্রমণে আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশে ঢুকে পড়লে তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে জটিলতার সৃষ্টি হবে। আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে গেলে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশেরও আশঙ্কা রয়েছে। সামনের দিনগুলোর পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও সেনা মোতায়েনের বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ফলে বাংলাদেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য কূটনৈতিক উপায়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। এ ছাড়া রেডক্রসসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হবে, যাতে পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা রাখাইনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে। বাংলাদেশও মিয়ানমারের চলমান সংকটের কারণে নিরাপত্তা ও অন্যান্য ধরনের চাপে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও গ্রহণযোগ্যতার পাশাপাশি আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশ কীভাবে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চলমান অপারেশন ১০২৭-এ রোহিঙ্গা এলাকাগুলোতে আরাকান আর্মি চাঁদাবাজি ও লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সামরিক জান্তা কিছু রোহিঙ্গাকে সামরিক প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। রোহিঙ্গা-রাখাইন সম্পর্ক উন্নয়নে এর প্রভাব পড়েছে ও পড়বে।


রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বিষয়ে পরিপূর্ণ সমাধান খুঁজতে গেলে বাংলাদেশকে আরাকান আর্মির সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ এবং মাদক-চোরাচালান ঠেকানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখন আরাকান আর্মিই প্রভাবশালী শক্তি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আরাকান আর্মি এখনো তাদের অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। তারা স্পষ্ট বলছে, এটি সামরিক নয়, রাজনৈতিক বিষয়। রাখাইনে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরই তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সমর্থন করা সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোকে শনাক্ত করে তাদের নির্মূল বা বিচারের আওতায় আনা হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও