আপনি কেমন স্বাস্থ্যব্যবস্থা চান?
আপনি কেমন স্বাস্থ্য চান? সবাই বলবে সুস্বাস্থ্যের কথা। কিন্তু প্রশ্নটায় যদি একটা শব্দ যোগ করি, আপনি কেমন স্বাস্থ্যব্যবস্থা চান? বোধ করি এই প্রশ্নের উত্তর সহজ না। আমরা এমন এক স্বাস্থ্যব্যবস্থা চাই, যা প্রত্যেক মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে ও জীবনের যথাযথ মর্যাদা দেয়।
আমরা এমন এক স্বাস্থ্যব্যবস্থা চাই, যেখানে মানুষের আর্থিক অবস্থা, সামাজিক পরিচয় বা তার ভৌগোলিক অবস্থান স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। আমরা এমন স্বাস্থ্যব্যবস্থা চাই, যা শুধু চিকিৎসার ওপরে নয় বরং সুস্থ থাকার ওপর গুরুত্ব দেয়।
স্বাস্থ্য খাতকে আমরা প্রাধান্য দিই না, স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিই না। এর প্রমাণ, স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অপ্রতুল বরাদ্দ। জনপ্রতি মোট দেশজ উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৫২তম দেশ। অথচ স্বাস্থ্যের জন্য জনপ্রতি খরচের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে ১৬৫তম।
স্বাস্থ্যের জন্য এ খরচের বেশিরভাগ আবার জনগণকে জোগাড় করতে হয় নিজেদের পকেট থেকে। এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৮২তম। যদি আসলেই আমরা স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দিতাম, তাহলে স্বাস্থ্যের জন্য জনপ্রতি খরচের দিক থেকে বিশ্বে আমাদের অবস্থান আর যা-ই হোক জিডিপিতে অবস্থানের চেয়ে পেছনে থাকত না।
আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান চিত্রটি খুবই হতাশাজনক। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার প্রকৃত ধারণাটি আমরা অনেকেই ঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারি না।
সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় এখনো যথাযথ দক্ষতার মিশ্রণের অভাব রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর ব্যবস্থাপনা, দুর্গম এলাকায় পদায়ন ও উপস্থিতির সমস্যা এবং কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি রয়েছে স্বল্প ব্যয়ে চিকিৎসা সেবাদান, ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণের মতো বহুবিধ চ্যালেঞ্জ।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা—সবার জন্য স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সবার জন্য সমানভাবে স্বাস্থ্যসেবা বিনা মূল্যে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশও এই ধারায় এগিয়ে চলছে। এর সঙ্গে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধীরাও আছে, তাদেরও যুক্ত করার কথা হচ্ছে।
চিকিৎসাসেবা সব মানুষের অধিকার হলেও এখন এটা পেতে মানুষকে ক্ষেত্রবিশেষে তদবির করতে হয়। সারা দেশের নিম্নবিত্ত মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ কিংবা যারা প্রতিদিনের জীবন-জীবিকা প্রতিদিন নির্বাহ করে, তাদের ক্ষেত্রে এই সেবাটা কিন্তু এক রকমের নয়।
তাদের স্বাস্থ্যসেবার জায়গাটা নিয়ে যদি আমরা ভাবি, তাহলে সেখানে আমরা অনেক বিরূপ চিত্র দেখতে পাই। আমরা যদি আমাদের হাসপাতালগুলোর দিকে তাকাই, তাহলেও আমরা সেই দৃশ্য দেখতে পাই। এর বাইরে যে ক্লিনিকগুলো আছে, সেখানেও তো আমাদের নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ পৌঁছতে পারে না।
আর সারা বিশ্বের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের সরকার বা রাষ্ট্রের কাছ থেকে যে ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকে, তারা যে ধরনের নাগরিক সুবিধা পেয়ে থাকে বা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের জন্য যা যা করা হয়, তার বেশিরভাগই আমরা আমাদের দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য করতে পারি না বা তাদের সেই সেবাটা আমরা দিতে পারি না। কিন্তু আমরা যদি একটা উন্নত দেশের কথা ভাবি, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবি, দেশকে বড় জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবি—তাহলে কিন্তু সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে একটা বড় বিভাজন রয়েছে। এ বিভাজন শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের। শহরেও অনেক ধরনের হাসপাতাল রয়েছে। গ্রামীণ পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা দিচ্ছে। তবে সব কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যকর্মীদের সঠিক প্রশিক্ষণ নেই। প্রতিটা ইউনিয়ন পরিষদে একটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র সুবিধা আছে। এগুলো ১০ থেকে ২০ শয্যাবিশিষ্ট করা হয়েছে। অনেক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে জনবল সংকট রয়েছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- স্বাস্থ্য ব্যবস্থা