স্বাস্থ্যসেবায় জন-আস্থার সঙ্কট: গণমাধ্যমের ভূমিকা, কৌশল ও করণীয়

বিডি নিউজ ২৪ মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:০৪

সপ্তাহদুয়েক আগে একটি গবেষণার কাজে গিয়েছিলাম দিনাজপুর। প্রত্যন্ত একটি গ্রামের উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স আমার গবেষণাক্ষেত্র। হাসপাতালেই ভিআইপি রোগীদের জন্য নির্ধারিত একটি কক্ষে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। ডাক্তার, নার্স, রোগী ও রোগীর স্বজনসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের সঙ্গে কথা বলছি। দেখছি, স্মরণে রাখছি ও নোট নিচ্ছি। আর রাতে ঘরে বসে সংক্ষিপ্ত নোটের বিস্তারিত লিখছি।


এক রাতে বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছি, হঠাৎ দরজায় টোকা। দরজা খুলতেই দেখি এক তরুণ ডাক্তার। ওইদিন দুপুরেই তার সঙ্গে কথা হয়েছে, ভাবও জমেছে খানিকটা। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন নিজ এলাকার এই হাসপাতালে। ওইদিন রাত্রিকালীন দায়িত্ব পালনের ফাঁকে এসেছেন আমার সঙ্গে আড্ডা দিতে। আর এই আড্ডার মাধ্যমে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায় কিনা এই আশায় আমি পুলকবোধ করলাম।


শুরু হলো আড্ডা। হাসপাতালে তার কর্মজীবন, চিকিৎসা দর্শন, জীবনবোধ, কাজ ও জীবন অভিজ্ঞতা, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যনীতি, স্বাস্থ্য শিক্ষা, চিকিৎসা শিক্ষা, মেডিকেল কলেজ, ডাক্তার হওয়ার প্রক্রিয়া, উপজেলা পর্যায়ে মানুষের রোগ ও তাদের মনস্তত্ত্ব এবং স্থানীয় রাজনীতিসহ নানান বিষয়ে কথা হলো আমাদের। এক পর্যায়ে তিনি জানলেন যে, আমি পেশাগত জীবনের শুরুতে বেশ কয়েকবছর সাংবাদিকতা করেছি। এছাড়া আমার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশোনাও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে। আমার বিদ্যায়তনিক এই অতীত জেনে তার মুখে, চোখে, বোধে এক ধরনের পরিবর্তন খেয়াল করলাম। ওই পরবর্তনটিতে ছিল খানিকটা সন্দেহ, অভিযোগ, রাগ, ক্ষোভ, অভিমান ও অনাস্থার মিশেল। মনে হলো তিনি আমার সঙ্গে কথা বলার উৎসাহ পাচ্ছেন না আর। কিন্তু তারপরও কিছুক্ষণ কথা হলো। একপর্যায়ে বিশ্বাস করতে শুরু করলেন। খুলে বললেন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সাংবাদিকতা সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা, মতামত ও পর্যবেক্ষণ। আজকের লেখাটির চিন্তাবীজ এসেছে ওই তরুণ ডাক্তারের সঙ্গে আড্ডা থেকেই। এই লেখাটিকে বলা যেতে পারে আমার প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ও পেশাগত বাস্তবতার আত্মবিশ্লেষণ বা আত্মানুসন্ধান।



যাই হোক, স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমানসে আস্থাহীনতা জন্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকাটি খুবই জটিল কিসিমের। এটি বহুমাত্রিকও বটে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সংবাদমাধ্যমগুলোতে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংবাদ ছাপানো, প্রকাশ, প্রচার ও সম্প্রচারের ক্ষেত্রে ইস্যু বা বিষয়বস্তু নির্বাচন, উপস্থাপন কায়দা এবং গুরুত্বারোপ কৌশল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের আস্থা কমিয়ে দিতে জোরালো ভূমিকা পালন করে। আর ওই ভূমিকাটি পালন করে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ ও কাঠামোগতভাবে। প্রত্যক্ষ কায়দাটি হলো নেতিবাচক সংবাদ নির্বাচনে ঝোঁক, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে ধরা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতার বয়ান হাজির করা। জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিদ্যা বিশেষজ্ঞ নন, এমন ব্যক্তিদের বিশেষজ্ঞ হিসেবে হাজির করা। স্বাস্থ্যখাতের অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে বড় করে তুলে ধরা। এ খাতের রাজনৈতিক মাত্রা ও বিভাজনকে উৎসাহিত করা। স্বাস্থ্য ও জীবন কুশলতাসম্পর্কিত বিষয়গুলো চাকচিক্যময়, সুড়সুড়িময় ও যৌন আবেদনময় করে তুলে ধরা।


নেতিবাচক সংবাদ নির্বাচনের ঝোঁকটি কাজ করে বিভিন্নভাবে। যেমন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে কোনো ভুল-ভ্রান্তি ও অবহেলাকে বেশ অগ্রাধিকার দিয়ে তুলে ধরা; অপারেশনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের যে কোনো ভুলত্রুটিকে বড় করে দেখানো; প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর ওপর গুরুত্বারোপ করা; চিকিৎসা খরচ ও কোনো কোনো হাসপাতালে অতিরিক্ত ফি আদায়কে বিশেষভাবে তুলে ধরা; হাসাপাতালে যে কোনো মৃত্যুকে চিকিৎসা অবহেলা হিসেবে অভিহিত করার মাধ্যমে।


আর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো সাধারণত কোনো ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কিত বিপন্নতা ও দুর্ভাগ্যের নাটকীয় বয়ান হাজির করে। চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় যে কোনো দুর্ঘটনার ব্যাপক প্রচার দেয়। কোনো রোগীর নেতিবাচক অভিজ্ঞতাকে মাত্রাতিরিক্ত আবেগমথিত করে তুলে ধরে। কোনো একটি বিশেষ ঘটনাকে বারবার তুলে ধরে। ফলো-আপ সংবাদগুলোতে দায়িত্বে অবহেলা ও দোষারোপের আলোকপাত করা হয় ব্যাপকমাত্রায়। মানুষের দুঃখ-দুর্দশাকে মানবীয় আবেদনময় দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরে। এছাড়াও চিকিৎসা ক্ষেত্রে নেতিবাচক কোনো অভিজ্ঞতা বা বয়ান সামাজিক মাধ্যমগুলো ভাইরাল হলে তা মূলধারার সংবাদগুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও