সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নতুন বিশ্বের জন্ম হচ্ছে
বিশ্ব বলতে গেলে একটা বহুমাত্রিক কাঠামোর দিকে যাত্রা শুরু করেছে। কোনো পরিবর্তন যখন হয়, বিশেষ করে বৈশ্বিক পরিবর্তন, সেটা খুব সহজে হয় না। বিভিন্ন বাধা, নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। ইতালির দার্শনিক আন্তোনিও গ্রামসির একটা সুন্দর কথা আছে : The old world is dying and the new world struggles to be born. যার অর্থ দাঁড়ায়-পুরোনো বিশ্বের মৃত্যু ঘটছে এবং নতুন বিশ্ব জন্মের জন্য সংগ্রাম করছে। এখন দানবের সময়, তার মানে যখন পুরোনো বিশ্বের মৃত্যুর ক্ষণ ঘনিয়ে আসে, সে সময়টা একটা দানবের সময় হয়, যার কিছু নমুনা আমরা ২০২৪ সালে দেখতে পেয়েছি। বিশেষ করে আমরা যদি ইউক্রেনের যুদ্ধ দেখি, ফিলিস্তিনের অর্থাৎ গাজার যুদ্ধ দেখি, তাহলেই এ দানবের বিষয়টা অনেকটাই বোঝা যায়।
ইউক্রেনের যুদ্ধে আমরা দেখেছি, যদিও তা মূলত শুরু হয়েছিল ন্যাটোর সম্প্রসারণকে কেন্দ্র করে, সেখানে একটা নির্বাচিত সরকারকে বলা যেতে পারে জনগণের ক্যুয়ের মাধ্যমে সরানো হয়েছে। এরপর আমরা দেখলাম, জেলেনস্কি নির্বাচিত হয়ে এলেন বটে; কিন্তু যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন তখন, সেটা তিনি মানলেন না, বরং ন্যাটোর সম্প্রসারণের দিকেই তিনি ঝুঁকে পড়লেন। অন্যদিকে রাশিয়ার সব সময়ই ইউক্রেনের ব্যাপারে একটা চিন্তা থাকে। কারণ অতীতে বড় আকারে তিন-তিনটা যুদ্ধ রাশিয়ার ওপর হয়েছে এ ইউক্রেনের মাধ্যমেই। একটা হলো নেপোলিয়নের যুদ্ধ, তারপর প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। তিনবারই যে যুদ্ধ পশ্চিম থেকে একেবারে মস্কো পর্যন্ত চলে গিয়েছিল, সেখানে ইউক্রেনের একটা বড় ভূমিকা ছিল। এ কারণে ইউক্রেন যেন নিউট্রাল (নিরপেক্ষ) থাকে, সেটা সব সময়ই রাশিয়ার পলিসির মধ্যে থাকে। অর্থাৎ যেটাকে মস্কোর রেডলাইন বলা হতো, তা যেন কখনো অতিক্রম না করা হয়। কিন্তু দেখা গেল, পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে আমেরিকা ন্যাটোর সম্প্রসারণটি রাশিয়ার দিকেই ঘটাতে চাইল। কাজেই সেটা বড় আকারেই বাধার মুখে পড়ল এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বেধে যেতে আমরা দেখলাম, যা এখনো চলছে। এতে প্রচুর ইউক্রেনবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, দেশটা তছনছ হয়ে গেছে বলতে গেলে। আমেরিকা বিপুল অঙ্কের ডলার ঢেলেছে এ ইউক্রেনে, যে ডলারগুলো কোনো না কোনো সময় ইউক্রেনকে ফেরত দিতে হবে। এটা কিন্তু বিনা পয়সার যুদ্ধ নয়, সবই ঋণ হিসাবে দেওয়া এবং তাতে আমেরিকার সমর শিল্পের একটা বড় লাভ হয়েছে। এখন এ যুদ্ধটা কীভাবে থামবে, সেটা দেখার বিষয়। বর্তমানে যুদ্ধটা থামার একটা সম্ভাবনা অবশ্য দেখা যাচ্ছে, সেটা আমেরিকায় রিপাবলিকান পার্টি বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের কারণে। কারণ তিনি প্রথম থেকেই এ যুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন। তিনি যুদ্ধটা কীভাবে থামাবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।