বিএনপি নির্বাচন নিয়ে যে কারণে বেশি বেশি কথা বলছে
বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ভোটের কথা বলছে। মানে, তারা ভোট নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইছে। জানতে পারলে দলগুলোর পক্ষে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে। এই সুযোগ রাজনৈতিক দলগুলোকে দিতে হবে। হুট করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে নামানো ঠিক হবে না। ভোট নিয়ে তারা সরকারের সঙ্গে বসবে। তারা কখন নির্বাচন চায়, সরকার কখন নির্বাচন করতে পারবে—এসব নিয়ে সব পক্ষকে একমত হতে হবে। তবেই সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন সম্ভব হবে।
অবশ্য নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে হতে পারে। আবার এ নিয়ে সরকারের ভেতরেই ভিন্নমত থাকতে পারে।
কেউ কেউ বলছেন, ২০২৬ সালের জুনে নির্বাচন হতে পারে। তবে প্রধান উপদেষ্টার উল্লেখিত সময়েই নির্বাচন হলে ভালো হবে। গত ১৫ বছর দেশের মানুষ জাতীয় বা স্থানীয় কোনো নির্বাচনেই ভোট দিতে পারেননি। ধারণা করা হচ্ছে, সামনের এই নির্বাচনে ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণ হতে পারে। তাই শীতকালে শুষ্ক মৌসুমে ভোট হওয়াই যুক্তিযুক্ত। তাহলে প্রচারণা ও ভোট দিতে মানুষের সুবিধা হবে।
জুন মাসে এমনিতেই বর্ষাকাল শুরু হয়। মৌসুমি বায়ুর আগমন বিলম্বিত হলে তা ভিন্ন বিষয়। ফেব্রুয়ারি থেকে আবহাওয়া নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অনুকূলে থাকে না। ভোটের দিন অঝোরধারায় বৃষ্টি বা ঝড় হলে ভোট দেওয়ার হার অনেক কম হতে পারে। এ সময় না করে ২০২৬-এর শেষে বা ২০২৭ সালের শুরুতে নির্বাচন করতে চাইলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। অহেতুক বিলম্ব হলে রাজনৈতিক দল ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হতে পারে।
তবে একটি বিষয় লক্ষ করা যাচ্ছে যে ভোটের আলাপ করলেই অনেকের ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে যাচ্ছে। অনেকে সমালোচনাও করছেন। বলছেন, শুধু নির্বাচন বা ভোটের জন্য জুলাই বিপ্লব হয়নি। এটা সত্যি যে রাষ্ট্রের আগাগোড়া সংস্কার করতে পারলেই জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ সফল হবে। কিন্তু সরকারের কার্যকলাপে কি তা প্রতিফলিত হচ্ছে? নতুন সরকারের বয়স চার মাসের বেশি হয়েছে। এই সময়ে সরকার নানা সংস্কারের কথা বলছে। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে, সরকারের কেউ কেউ কাজের থেকে কথা বেশি বলছেন। কখনো তো মনে হচ্ছে সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন ও এর প্রস্তুতিকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে না তো?
সংস্কার অবশ্যই হবে। কমিশনগুলো শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই অনুযায়ী সরকার সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তবে সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন প্রস্তুতি চলবে। আমাদের নির্বাচনী আইনেও সংস্কার আনতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হবে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে হবে। পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু এসব বিষয়ে কেমন যেন একধরনের গড়িমসি লক্ষ করা যাচ্ছে সরকারের আচরণে।
বলা হচ্ছে, ফ্যাসিবাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন করা যাবে না। ফ্যাসিবাদীদের বিচার করা নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। আওয়ামী লীগের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বটে। মামলাও হয়েছে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের বিস্তর নেতা–কর্মী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ রকম অনেকের বিরুদ্ধে জুলাই বিপ্লবের সময় প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে। কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা রীতিমতো জুলাই বিপ্লবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক কর্মীদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি হত্যার হুমকি দিয়েছেন। তাঁদের আটক করা হচ্ছে না। তাঁদের আটক করে আইনের আওতায় আনতে সরকারের বাধা কোথায়?