যে কারণে ভারতকে তার বাংলাদেশ নীতি বদলাতেই হবে
ধাঁধা বোধ হয় কাটেনি ভারতের। বাংলাদেশে দেড় দশকে জেঁকে বসা শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ভারত হয়তো ভাবছে, সত্যিই! কী করে হলো জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লব?
কী উপায়ে একটি দল এবং আরও নির্দিষ্ট করে বললে ঢাকায় জমিদারসুলভ এক ‘প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা’র ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ রক্ষার নীতি সাজানো যায়—সেই প্রশ্নে এর আগে পররাষ্ট্রনীতির পণ্ডিতদের দিল্লিই ধাঁধায় ফেলেছিল।
কিন্তু আজকের বাস্তবতা হলো, হাসিনা জনরোষের তোড়ে পালিয়েছেন এবং হাজার অপরাধ করেও তিনি আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে প্রতিবেশীর দুয়ারে ঠাঁই পেয়েছেন। নির্ভরতার কী অপূর্ব প্রতিদান! কী দুর্ভাগ্য অন্য সব স্বৈরাচারী শাসকদের, যাঁরা তাঁদের অভিভাবকদের দেশে আশ্রয় পাননি!
হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার বড় প্রমাণ রাখল ভারত। গদি ছাড়তে বাধ্য হওয়ার আগপর্যন্ত হাসিনা তিন তিনটি নির্বাচনে কৌশল করে ক্ষমতায় ছিলেন। এ বিষয়ে ভারতের মনোভঙ্গি ছিল, হাসিনা চালাকি করে করে ক্ষমতায় থেকেছেন, তাতে ভারতের কী!
এখন বাংলাদেশের পতিত স্বৈরশাসককে ‘বিশেষ খাতির’ করায় যে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘিত হচ্ছে, সে বিষয়টি গ্রাহ্যই করছে না দিল্লি। গণহত্যা ও ব্যাপক দুর্নীতির দায়ে হাসিনা দণ্ডিত হলে তাঁর দিল্লিতে অবস্থান ভারতের জন্য বিব্রতকর হতে পারে, সে বিষয়টিকেও তারা আমলে নিচ্ছে বলে মনে হয় না।
ভারতের নেতাদের আচরণ ও ভাষাভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা বাংলাদেশে তাঁদের ‘স্বর্গ’ হারিয়েছেন। এখন একটি নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে এবং সেই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক ঠিকঠাক করা দরকার—এমনটি দিল্লি ভাবছে বলে মনে হচ্ছে না।
ভারতীয় কৌশলবিদেরা অবশ্য ধরে নিয়েছেন, বাংলাদেশের আগামী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পুনরুত্থান শিগগিরই সম্ভব হবে না। তাই হয়তো তাঁদের কূটনীতিকেরা নতুন ‘বন্ধু’র খোঁজ করছেন।
নয়াদিল্লির সাউথ ব্লক এখনো পরিষ্কার বিবৃতি দেয়নি, ভারতের বাংলাদেশ নীতিতে পরিবর্তন আসছে। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ওপর জোর দেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়নি রাজনৈতিক মহল থেকে।
ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে গিয়ে দিল্লি বরং একধরনের অহংবোধ দ্বারা তাড়িত হচ্ছে এবং মাতবর ‘বড় ভাই’-এর মতো আচরণ করছে। ভারত সম্পর্কে এই ধারণা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য রাজধানীতেও বিদ্যমান।