উগ্র রাষ্ট্রবাদ আর ধর্মান্ধতা মুদ্রার এপিঠ–ওপিঠ

প্রথম আলো মহিউদ্দিন আহমদ প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:০২

এ সপ্তাহের গরম খবর হলো, জাতীয় পতাকা নিয়ে হুজ্জত। জাতির পতাকা থাকে না। পতাকা থাকে রাষ্ট্রের। আমরা সেটাকে জাতীয় পতাকা বলি। কারণ, রাষ্ট্রকেই আমরা জাতি মানি। কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের যেমন একটা লোগো থাকে, তেমনি রাষ্ট্রের থাকে একটা পতাকা। এই পতাকা নিয়ে আমরা আবেগ তৈরি করি। কখনো ভালোবাসায় ভাসাই, কখনো ঘেন্নায় ডুবাই। সম্প্রতি আমরা বাংলাদেশে ও ভারতে পতাকা নিয়ে এ রকম ভালোবাসা ও ঘৃণার প্রকাশ দেখলাম।


আমরা অনেক সময় ভয়ে আমাদের ভাবনাগুলো প্রকাশ করি না। না জানি ‘মব’ এটাকে কীভাবে নেবে। দেশে তো এখন চলছে ‘মবোক্রেসি’। কে কখন কার গুষ্টি উদ্ধার করে কিংবা পেটায়, তার নিশ্চয়তা নেই। হঠাৎ একদল লোকের খায়েশ হলো, চলো, আমরা ওখানে গিয়ে গরু জবাই করে মাহফিল করি। মুফতে মাংস-পোলাও পেলে লোক জড়ো হয়ে যায় অনায়াসে।


আমার মনে আছে, একবার শেখ হাসিনার লোকেরা ইস্কাটনে কামাল হোসেনের বাড়ির সামনে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রেখেছিল। সুপ্রিম কোর্টের সামনেও একই কাণ্ড ঘটিয়েছিল। মনে আছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরোধিতা করে খাগড়াছড়িতে এক সমাবেশে একটি গাড়িবহর নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনার বুদ্ধিতে কাঁচপুর সেতুর ওপর আড়াআড়ি করে ট্রাক রেখে দিয়েছিলেন শামীম ওসমানের লোকেরা, যাতে খালেদা জিয়া না যেতে পারেন। সারা দিন তিনি সেখানে অবরুদ্ধ ছিলেন।


শেখ হাসিনার ট্রাকপ্রীতি এরপর আরও বেড়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় গিয়ে তিনি একবার খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসার সামনে, আরেকবার গুলশানে বিএনপি অফিসের সামনে বালুবোঝাই ট্রাক দিয়ে রাস্তার বন্ধের বিস্ময়কর রণকৌশল ব্যবহার করেছিলেন। এসব হচ্ছে ‘শত্রু’কে শায়েস্তা করার ফিকির। কীভাবে এর ব্যাখ্যা করবেন? মানুষের আচরণ নির্ভর করে তার রুচি ও শিক্ষাদীক্ষার ওপর। আইন দিয়ে এটি শেখানো যায় না।



এ দেশের মানুষ নানা কারণে ভারতবিরোধী। মূল কারণ দুটি। প্রথমত, এটা হিন্দু-মুসলমানের ঝগড়া। এটা চলছে, চলবে, যত দিন মানুষ তার ধর্মীয় পরিচয়কে প্রাধান্য দেবে। ভারত হয়েছে হিন্দুরাষ্ট্র, বাংলাদেশ হয়েছে মুসলমানের দেশ। তাই অযোধ্যায় মসজিদ ভাঙা হলে এখানে মন্দির ভাঙচুর হয়। এসব কারা করে? আমরা অনেক সময় বলি এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা দাবি করি, এখানে সম্প্রীতির ফুরফুরে বাতাস বয়ে যাচ্ছে নিরবধি। কতিপয় দুষ্কৃতকারী এসব হীন কাজ করে আমাদের মধ্যকার সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। সমস্যা হলো বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো নিয়মিত ঘটছে। যারা ঘটায়, তারা বলে কেন, ইন্ডিয়া তো এটা করেছে।


বাংলাদেশে ইসকন ইস্যুতে আবহাওয়া বেশ গরম। এক হিন্দু ধর্মগুরু রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। ভারতে তার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের তদারকি বাহিনী পাঠানোর আবদার করেছেন। মমতা এত দিন পশ্চিমবঙ্গে রাজত্ব করছেন ‘মুসলিম ভোটব্যাংক’ ব্যবহার করে। তিনি রোজা রাখেন, কোরবানি দেন, খাজাবাবার মাজার জিয়ারতের সুবিধার জন্য আজমিরে রেলগাড়ি পাঠান প্রতিদিন। এদিকে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের বড় ‘হিন্দু ভোটব্যাংক’ কবজা করে তাদের শক্তি বাড়াচ্ছে। বড় ব্যাংকটি না আবার একেবারে হাতছাড়া হয়ে যায়, এ নিয়ে মমতার কপালে ভাঁজ পড়েছে। তাই তিনি হঠাৎ করেই ‘হিন্দু’ হয়ে গেলেন। এদিকে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাস রক্ষা করতে জাতিসংঘের বাহিনী চেয়েছেন।


হাওয়া দেখে পল্টি খাওয়া রাজনীতিবিদদের বলা হয় ‘ডেমাগগ’ বা গলাবাজ। মমতাও তা–ই। আর কে না জানে, আমাদের এ অঞ্চলে নেতা নেই বললেই চলে। কেবল ডেমাগগের ছড়াছড়ি। মাঠ কে কত গরম রাখতে পারেন, এখন চলছে তার প্রতিযোগিতা। তা ছাড়া নজর কাড়ার ব্যাপারও আছে। সব মিলিয়ে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব।


যুদ্ধ তো ভালো নয়। যুদ্ধ মানেই হত্যা, ধ্বংস, ক্ষয়। একাত্তরের মার্চে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো’ বলে যাঁরা রাজপথে বুলন্দ আওয়াজ তুলেছিলেন, ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পর তাঁদের অনেকেই দেশের সাত কোটি মানুষকে বিপদের মধ্যে ফেলে সবার আগে কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ যাঁরা চান, তাঁরা যুদ্ধ করেন না। তবে যুদ্ধের ফসল পকেটে পুরতে তাঁরা সবার আগে হাজির হন। এটা তো আমাদের চোখের সামনেই দেখা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও