মহাসড়ক অবরোধ না করলে আন্দোলনের ফল পাওয়া যায় না কেন?
ট্র্যাফিক এলার্ট পেইজটি যারা ফলো করেন, তারা লক্ষ করেছেন যে ঢাকার অন্যান্য সড়কের পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিনই মানুষ জানতে চাইছেন ঢাকা-ময়মনসিংহ-গাজীপুর-টঙ্গি মহাসড়কের অবস্থা কি স্বাভাবিক? নাকি যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে? কারণ গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধের কারণে গত কয়েকদিন ধরেই মানুষ দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকছেন এই এলাকায়। বাধ্য হয়ে অনেক মানুষ হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা হয়েছেন।
অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসছিলেন ফয়জুল আলম। বাসে আসতে সময় লাগবে ৩/৪ ঘন্টা, এই ভেবেই বাসে করে আসছিলেন। কিন্তু সড়ক অবরোধের কারণে প্রায় ৯/১০ ঘন্টা আটকে ছিলেন। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে অসহায় হয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েছিলেন বিলকিস বেগম। উনি তার মেয়েকে নিয়ে ফুলপুর গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার জন্য রওনা দিয়েছিলেন সকাল ৭ টায়। দুপুর ১২/১ টার মধ্যে পৌঁছানোর কথা থাকলেও, সন্ধ্যা ৭ টা বেজে গিয়েছে ঢাকা পৌঁছাতে। পথে বাথরুম না থাকায় ওনাকে খুব কষ্ট পেতে হয়েছিল।
গাজীপুরে একেক সময়, একেক কারণে শ্রমিকেরা কেন বিক্ষোভ করছেন উল্লেখ করে শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার বলেছেন, ‘আমারও একই প্রশ্ন, বেতনের দাবিতে সড়ক কেন অবরোধ করে তারা? শ্রমিকেরা ইচ্ছা করলে বিজিএমইএর ভবনে যেতে পারে। কারখানায় আন্দোলন করতে পারে। হাজার হাজার মানুষকে কষ্ট দিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখা ঠিক হচ্ছে না।’ (প্রথম আলো)।
কেন শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেন? পোশাকসহ অন্যান্য শ্রমিকদের অবরোধে সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়, মানুষ অসুবিধার মধ্যে পড়েন, জরুরি কাজ বাধাগ্রস্থ হয়, শিশু ও নারী ভয়াবহ ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। অনেকসময় এই চাপ ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। অবশ্য শুধু শ্রমিকরাই নন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্রছাত্রী, পেশাজীবি সবাই প্রতিবাদ জানাতে সড়ক অবরোধ করেন।
সড়ক অবরোধ করার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে যে এর ফলেই প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে বলে মনেকরেন আন্দোলনকারীরা। সাধারণ মানুষের অসুবিধা হলে কর্তৃপক্ষ ও সরকার দ্রুত দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন। মহাসড়ক অবরোধ একটি গুরুতর সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা। এই ধরনের অবরোধ কেবল সাধারণ জনগণের যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে।
যাক মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি, দেশের বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে প্রায়শই সড়ক অবরোধ করেন। তাদের দাবির মধ্যে আছে নিয়মিত বেতন, উৎসব ভাতা, বেতন বৃদ্ধি, শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ প্রভৃতি এবং এর কোন দাবিই অযৌক্তিক নয়। এগুলো না পেলে মালিকের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার জন্য পথে না নেমে কোন উপায় থাকে না।