বিশ্ব নেতাদের অনুপস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ কোন পথে?
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ ২৯) বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি সচেতনতা এবং প্রতিক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। কিন্তু ২০২৪ সালে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকেই এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেননি, যা গ্লোবাল সাউথ তথা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ফ্রান্সের মতো বড় অর্থনীতির দেশগুলোর নেতাদের অনুপস্থিতি আন্তর্জাতিক জলবায়ু কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পরিবর্তনের এই সময়ে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের অনুপস্থিতি যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিজয় এবং তার প্রশাসনের সম্ভাব্য জলবায়ু নীতি এই সম্মেলনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
এবারের সম্মেলনের অন্যতম একটি মূল বিষয় ছিল ‘কর্পোরেট স্থায়িত্ব এবং জলবায়ু কর্ম।’ কর্পোরেট খাতের অবদান জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেক সংস্থাই ইতিমধ্যে নেট-শূন্য কার্বন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। তবে, কর্পোরেট খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কি প্রকৃত উন্নয়নকে নিশ্চিত করবে, না কি শুধুমাত্র আর্থিক মুনাফা অর্জনের জন্য একটি পন্থা হয়ে থাকবে?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনো অমীমাংসিত। জলবায়ু পরিবর্তন একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণ হয়ে উঠছে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে গলিত হিমবাহ, সমুদ্র স্তরের বৃদ্ধি, এবং জঙ্গলে আগুনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা বাড়ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে জাতিসংঘ প্রতি বছর কপ সম্মেলনের আয়োজন করে, যেখানে বিশ্ব নেতারা একত্রিত হয়ে কার্বন নির্গমন হ্রাস ও স্থায়িত্ব পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু কপ ২৯-এ বড় নেতাদের অনুপস্থিতি শুধুমাত্র তাদের নিজ নিজ দেশের সীমাবদ্ধতা নয়; এটি বৈশ্বিক পরিবেশগত দায়িত্বের প্রতি অবজ্ঞা হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে।
কপ ২৯ সম্মেলনে জি-২০ জোটভুক্ত অনেক দেশের শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতি দৃষ্টিকটু। এটি একধরনের ভীতি তৈরি করছে যে, বড় অর্থনীতির দেশগুলো নিজেদের আর্থিক ও রাজনৈতিক স্বার্থকে সামনে রেখে বৈশ্বিক দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, এবং ফ্রান্সের মতো দেশের নেতারা না থাকায়, এ সম্মেলন থেকে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনাও কমে গেছে।
জি-২০ জোটের দেশগুলো বিশ্বের ৮০ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী এবং এই দেশগুলোর উদ্যোগ ছাড়া স্থায়ী উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষা সম্ভব নয়। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য প্রধানত দায়ী জি-২০ জোটভুক্ত দেশগুলো এবং তাদের অনুপস্থিতিতে জলবায়ু সংকট সমাধানে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা আসতে পারে।
এই দেশগুলোর অনুপস্থিতি যেমন আন্তর্জাতিক জলবায়ু রাজনীতিকে দুর্বল করছে, তেমনি দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো বঞ্চিত হচ্ছে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নেতা ও প্রতিনিধি যারা উপস্থিত আছেন, তাদের জন্য কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।