কোন পথে নির্বাচন কোন ধরনের সরকার
স্বৈরতান্ত্রিক সরকার বন্ধে আইনি ও কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে জোরালোভাবে। এই ভাবনাটা নতুন কিছু নয়। পরিবর্তনের একটি প্রস্তাবিত দিক-দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা। তাত্ত্বিক রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল আলম খান দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কথা বলেছিলেন অনেক আগে।জাসদ রাজনীতিও সেই ধারণাকেই ধারণ করে চলেছে। ওই সময় স্বল্প পরিসরে বিষয়টি রাজনৈতিক টেবিলে আলোচনায় এলেও খুব একটা জোরালো হয়নি। প্রথম সংবিধান প্রণেতাদের দল আওয়ামী লীগের অনেকেই বিরূপ সমালোচনা করলেও অনেকেই তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি। সম্প্রতি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। বিশেষজ্ঞগণ এ নিয়ে সোচ্চারও।
প্রশ্ন হচ্ছে, স্বৈরতন্ত্রের জন্য কি কাঠামোগত দিকটি দায়ী? আবার যারা মনে করেন, আমাদের সংবিধান এমনভাবে তৈরি যে, সরকার ইচ্ছা করলেই স্বৈরতন্ত্রকে বেছে নিতে পারে। বাস্তবতা এর সঙ্গে কতটা সাযুজ্যপূর্ণ? আসলে কাঠামোগত কিংবা সংবিধানের যতই পরিবর্তন আনা হোক না কেন, যদি কেউ আন্তরিকভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা চান তাহলেই সেটা সম্ভব, না হলে যতই বেড়াজাল দেওয়া হোক না কেন,স্বৈরাচার ঠেকানো সম্ভব নয়।
আমাদের এখানে সংবিধান স্থগিত করেও সরকার পরিচালিত হয়েছে। বিশেষ করে সামরিক সরকার চলাকালে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই তারা সংবিধানকে স্থগিত করে দিয়েছে। হয়তো বলা হবে,সামরিক শাসক গণতন্ত্রের আওতায় পড়ে না। কিংবা তারা গণতন্ত্র চর্চা করতেও ক্ষমতায় বসে না। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির কথা বলে যেসব রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় বসে তারাও কি গণতন্ত্রকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করে কিংবা চর্চা করে? তারা সামরিক সরকারের মতো সংবিধান স্থগিত করে না এবং তারা সংবিধানকে সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় আরোহন করে কিন্তু সংবিধানকে পাশে সরিয়ে রেখে নিজেরা একসময় স্বৈরতন্ত্রকে ধারণ করে।
যদি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করা হয় তবে বলতেই হবে, এটাই যেন এখানকার রাজনৈতিক রীতি। এই প্রমাণতো আছেই। এমতাবস্থায় বলতে হবে, সংবিধান কখনো স্বৈরতন্ত্রকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। অর্থাৎ রাষ্ট্র স্বৈরতন্ত্রকে ধারণ করবে নাকি গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হবে তার প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে শাসকের মর্জির ওপর। ক্ষমতাসীনরা যদি সংবিধানের চেতনা বা স্পিরিটকে ধারণ না করেন যদি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার নামাবলি পরে অগণতান্ত্রিক হয়ে পড়েন,তাহলে তাকে ঠেকাবে কে?
একটু ভিন্নদিক আলোচনা করা যায়, সবক্ষেত্রেই রাষ্ট্র রাজনীতিবিদদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথাই বলা হয়ে থাকে। কাঠামোগত দিক কিংবা সাংবিধানিক দিক যাই বাস্তবায়নের কথা আসে সেটা করবে রাজনৈতিক দলগুলো। এই রাজনৈতিক দলগুলোর ভিতরে যদি গণতন্ত্র অনুপস্থিত থাকে,তারা যদি গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র লালন করে,তাহলে তাদের দ্বারা স্বৈরতন্ত্র বাস্তবায়নের সম্ভাবনাই বেশি।
এখানে দল গঠনের প্রথাগুলো আলোচনায় আসতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর যে গঠনতন্ত্র থাকে তারা নিজেরাই সেটা অনুসরণ করে না। এমন দলও আছে বছরের পর বছর সাধারণ সভাই করে না। অথচ তাদের গঠনতন্ত্রে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের কথা থাকে। কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা নির্বাচন হয় মুখ চিনে এবং বাকিদের মনোনীত করা হয় শীর্ষনেতার মুখের কথায়। আবার কেউ আছে যারা গঠনতান্ত্রিক নিয়ম রক্ষার্থে সাধারণ সভা করলেও সেখানে তাদের দলীয় শীর্ষ নেতাদের গঠনতান্ত্রিকভাবেই সেই অসীম ক্ষমতা দেওয়া হয় যাতে তারা নিজেরা একনায়ক বনে যান।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জাতীয় নির্বাচন
- কাঠামো পরিবর্তন