রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল হতেই হবে

ডেইলি স্টার সৈয়দা আইরিন জামান প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:১৮

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এক সমুদ্র চ্যালেঞ্জ সঙ্গে করে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দেখা গেছে—যে লক্ষ্য, আকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, শাসকগোষ্ঠী তা থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করেছে। সংবিধান বার বার কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। বৃটিশ বেনিয়াদের তৈরি করা আইন স্বাধীন দেশে প্রয়োগ করা হচ্ছে। তারা যে 'ডিভাইড অ্যান্ড রুল' পলিসি অনুসরণ করে ভারতবর্ষ শাসন করে গেছে, সেই অশনির পথ ধরে আমাদের শাসকরা দেশ শাসন করেছে। ফলে একটি মাটির সিঁড়ি নক্ষত্রের আকাশে উঠেছে এবং তা গণ-অভ্যুত্থানের দামামায় ভেঙে পড়েছে।


কর্তৃত্ববাদী শাসকের বিদায়ঘণ্টা বাজার তিনদিন পর বর্তমান অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ৫ আগস্ট বিকেল থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে। তাদেরকে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়। মানুষের জীবন ও সম্পদ দুটোই ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন হয়। ফ্যাসিবাদি সরকার রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভ—আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও গণমাধ্যম পুরোপুরি ধ্বংস করেছিল। মূলত নির্বাহী বিভাগের কাঁধে ভর করেই সরকার তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনকে যত অন্যায্য সুবিধা ছিলো তার সবই সরকার দিয়েছিল এবং উভয় পক্ষ তা অঞ্জলি ভরে গ্রহণ করেছে। নীতি-নৈতিকতা সেখানে সাইমুমের মতো উড়ে গেছে। এই প্রক্রিয়ায় জড়িতদের অধিকাংশের অবৈধ সম্পদের যে বিবরণী পাওয়া যাচ্ছে, তা আরব্য রজনীর শাহরাজাদের গল্পকে ম্লান করে দিয়েছে।


বর্তমান সরকার রাষ্ট্র মেরামতের ব্রত নিয়ে মাঠে নেমেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নাজুক অবস্থায় আছে। কেবল সেপ্টেম্বর মাসে ২৮ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন এবং ১৬ জন খুন হয়েছে রাজনৈতিক সহিংসতায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে নিম্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ চরম সংকটে জীবন অতিবাহিত করছেন। দীর্ঘদিন ধরে গার্মেন্টস শিল্পে চলছে চরম শ্রমিক অসন্তোষ।



সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেয়েছেন। বলা হচ্ছে ও সভ্য ভাষ্যও তাই যে, একটি গোষ্ঠী কিংবা একাধিক গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। পরাজিত শক্তির জন্য এটা একটা সুযোগ বটে! তারা 'ঘোলা পানিতে মাছ শিকার' করতে চাইছে কিংবা 'ঝোপ বুঝে কোপ মারা'র কাজটি করছে।


একদলীয় সরকার, সামরিক স্বৈরাচার, নির্বাচিত স্বৈরশাসন ও কর্তৃত্ববাদী শাসন মাড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। ১৯৭১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত এই ৫৩ বছরে একটি বিষবৃক্ষ মাটিতে যেমন তার শেকড় গ্রথিত করেছে, আবার আকাশের পথেও ডানা মেলেছে। এই বিষবাষ্পের বাস্তবতার হিসাব অত্যন্ত জটিল, দ্বন্দ্বপূর্ণ, ভয়ানক এবং জঘন্য। যুক্তরাজ্যের ইডসিএল প্রেস থেকে 'দ্য ওয়াইল্ড ইস্ট: ক্রিমিনাল পলিটিক্যাল একোনোমিক্স ইন সাউথ এশিয়া' নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলায় বইটির নাম দাঁড়ায়, 'বুনো পূর্ব: দক্ষিণ এশিয়ার অপরাধমূলক রাজনৈতিক অর্থনীতি'। সহজ কথায় রাজনৈতিক ঠগিতন্ত্রের অর্থনীতি। অধিক ঘনবসতিপূর্ণ, চরম বৈপরীত্যপূর্ণ, নোংরা ও অপরাধে পরিপূর্ণ নগরসমূহে ক্ষমতাবানরা গড়ে তোলে নিজস্ব বাহিনী ও রাজত্ব। এই দীর্ঘ ঠগিতন্ত্রের ইতিহাস মাথায় রেখে এই সরকারকে তার কর্মপন্থার বিন্যাস সাজাতে হচ্ছে।


৮ আগস্ট সরকার গঠনের পর মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা শপথ গ্রহণকারী উপদেষ্টাদের মাঝে দপ্তর বণ্টন করেছেন। উপদেষ্টাগণ বেসামরিক আমলাদের সহায়তায় দেশ পরিচালনা শুরু করেছেন।


এই শতকের শুরুতে বিএনপির শাসনামলে আমলাদের ডিএনএ ফাইল তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই ডিএনএ ফাইলের কার্যপরিধির বিস্তৃতি ঘটেছে। তারই ভিত্তিতে আমলাদের পদোন্নতি এবং গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে পদোন্নতি বঞ্চিতদের অধিকার ফিরিয়ে দিচ্ছে। এটি নিশ্চয় যথাযথ উদ্যোগ। তবে আশঙ্কা থেকে যায় তাদের সহযোগিতার প্রশ্নে। তারা এই সরকারকে কতটা আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করবে? এই প্রশ্নের জবাব তাদের ডিএনএ ফাইলের ভেতরেই প্রথিত রয়েছে। ঠিক সেই কারণেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে হতে হবে যোগ্য এবং চৌকশ। অর্পিত মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধি সম্পর্কে তার যথেষ্ট জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা থাকার কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের উল্লেখযোগ্য অবদান থাকাটাও বাঞ্ছনীয়। রাজনৈতিক সরকারের ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের এসব গুণাবলী থাকা অপরিহার্য নয়। কিন্তু এই অন্তবর্তী সরকারের চরিত্রটি একেবারেই স্বতন্ত্র। ছাত্র-জনতার সীমাহীন আকাঙ্ক্ষার চাপ তাদের মাথার ওপরে রয়েছে। বেসামরিক আমলারা যেন কোনোভাবেই উপদেষ্টাগণকে ভুলপথে পরিচালিত করতে না পারেন, সেই লক্ষ্যেই উপদেষ্টাগণকে হতে হবে বহুমাত্রিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী। হতে হবে দূরদর্শী ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও