‘বিপ্লব’ রক্ষার পথ কী, কারা হবেন প্রহরী

প্রথম আলো আলতাফ পারভেজ প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৪৩

বাংলাদেশের জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানকে ‘বিপ্লব’ বলতে অনেকের আপত্তি আছে। এটা যে সফল গণ–অভ্যুত্থান, সেটা প্রায় সবাই মানেন। তবে যেকোনো রাজনৈতিক গণ–অভ্যুত্থানকে রক্ষা ও এগিয়ে নেওয়ার ধরন ‘বিপ্লবকে’ সফল করার মতোই। কিন্তু সেই কাজটা কী রকম? বিশ্বের অন্যত্র কীভাবে হয়েছে সেসব কাজ? বাংলা-বসন্তের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে ঐতিহাসিক সেসব শিক্ষার দিকে চোখ ফেরানো দরকার এখন।


মাও সে–তুংয়ের এ রকম একটি উক্তি আছে, ‘বিপ্লব কোনো ভোজসভা নয়।’ হুনানের কৃষক আন্দোলনের ওপর লিখতে গিয়ে তিনি এটা বলেছিলেন। কথাটার আগে-পিছে আরও কিছু দরকারি কথা আছে। মাও সেখানে বলেছিলেন, ‘বিপ্লব কোমল কিছু নয়, কাঁথা সেলাই বা প্রবন্ধ লেখার মতো নম্র ধরনের কাজ নয়। বৈপ্লবিক পরিবর্তন মোটাদাগের বলধর্মী কাজ। এতে থাকতে হয় দৃঢ় সংকল্প এবং পুরোনোকে বদলে ফেলার আপসহীন চেতনা।’ তখনকার চীনের কৃষক আন্দোলনের কেন্দ্র হুনানে ৩২ দিনের এক অনুসন্ধান শেষে ১৯২৭ সালে মাও এসব লিখেছিলেন। প্রায় এক শ বছর হলো এ রকম ভাবনার। বাংলাদেশের গণ–অভ্যুত্থানের সঙ্গে মিলিয়ে পাঠ করলে বোঝা যায়, কথাগুলো এখনো কতটা জরুরি।


সাংবিধানিক নিয়মকানুন মেনে পুরোনো আমলাতন্ত্র দিয়ে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রত্যাশার বাস্তবায়ন আসলেই দুঃসাধ্য। তাতে টানাপোড়েন কেবল বাড়ছে। না বিপ্লবী-না সংবিধানপন্থী একটা অবস্থার বিতর্কের পড়েছে বাংলাদেশ। ক্রমে একটা ‘ভুল’ আরেকটা ভুলের জন্ম দিচ্ছে। ফলে হেমন্তের আকাশে বর্ষার মতো কালো মেঘ জমছে। কিন্তু কালো মেঘ সরিয়ে চলতি হেমন্তকে কীভাবে শস্যের ও তৃপ্তির ঋতু করা যায়?

সাংস্কৃতিক বিপ্লব কেন জরুরি


‘বিপ্লব কোনো সূচিকর্ম নয়’ বলার পাশাপাশি মাও সে–তুং পরবর্তীকালে (১৯৬৬-৭৬) গণপরিবর্তন রক্ষায় সাংস্কৃতিক কাজ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। কেবল লেখাই নয়, সাংস্কৃতিক বিপ্লবেও নেমেছিলেন। একেই প্রধান হাতিয়ার ভেবেছেন। ‘সাংস্কৃতিক কাজ’ মানে গানবাজনা নয়, সমাজদেহ ও প্রশাসন থেকে ঔপনিবেশিক উপাদানগুলোর উচ্ছেদ, যা কেবল কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ‘পরিচালক-মহাপরিচালক’ বদল করে অসম্ভব।


বাংলাদেশকেও অবশ্যই ঔপনিবেশিক–পথ বদলে এগোনোর একটা ‘জাতীয় পথ’ খুঁজে পেতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন এত দিনের ‘পুরোনো’ মরে যেতে বসলেও এবং ‘নতুন’ তার জন্মের সংগ্রামে লিপ্ত হলেও—আপাতত চলছে সিদ্ধান্তহীনতার কাল।



জুলাই-আগস্টের গণ–আন্দোলন শেষে এর সংগঠকদের দরকার ছিল দেশের সর্বত্র অভ্যুত্থানের চেতনায় ‘সাংস্কৃতিক কাজে’ নামা। সরাসরি বললে, দেশজুড়ে সংলাপে নামা। বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক সংগঠকদের কেউ কেউ সে কাজ করছেন। উদ্যোগগুলো প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত। সেসবের বড় অংশ আবার ‘ভদ্রলোক সমাজের’ চৌহদ্দি পেরোতে পারছে না। আছে তাতে গোষ্ঠীবাদী, জাতিবাদী, বিভেদবাদী রণকৌশলের আলাপও। ফলে বাংলা-বসন্ত আদর্শিক শক্তির জায়গাটা কত দিন মজবুত থাকে, সেটি একটি প্রশ্ন। কারণ, এটি কখনো কখনো ভুল ব্যাখ্যারও শিকার হচ্ছে।


মাও যেভাবে হুনান গিয়ে ‘ইতর সমাজে’ মিশে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নিশানা খুঁজে পান, বাংলাদেশেও গণ–অভ্যুত্থানের কর্মী-সংগঠকদের আমলাতন্ত্রের সঙ্গে ‘সমন্বয়’ ও ভদ্রলোক-সমাজ ছেড়ে আবার সাধারণ জনগণের কাছে ফিরে যাওয়া দরকার। যদি তাঁদের প্রকৃতই বিশ্বাস থাকে, ওই জনগণই ইতিহাসের এই নতুন পর্বের নির্মাতা এবং কেবল তাঁরাই একে এগিয়ে নিতে সক্ষম।


‘প্রহরী’ হবেন কারা 


বিপ্লব কীভাবে রক্ষা করতে হবে, সে বিষয়ে মাও ছাড়াও বিশ্বজুড়ে আরও অনেক পরিবর্তনবাদী বিস্তর লিখেছেন। তাতে মূলত গুরুত্ব পেয়েছে জনগণের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বসা ও বৈপ্লবিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের পথ ঠিক করা। অর্থাৎ গণ–অভ্যুত্থানের পরিসরকে ক্রমে বেশি করে অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলতে হয়। কেবল এ পথেই অভ্যুত্থান জনগণের ‘উৎসবে’ পরিণত হয়।


যদিও জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বিগত ১৫ বছরের বহু শ্রেণি-পেশার আন্দোলনের নির্যাস মিশে আছে; কিন্তু এ–ও সত্য, মাত্র দুই মাসে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব সমাধা হয়েছে। এত অল্প সময়ে এ রকম একটা পরিবর্তন সাধিত হওয়ার সীমাবদ্ধতা হলো, অনেক মানুষ আন্দোলনে শামিল হলেও তার দার্শনিক লক্ষ্য ও ভবিষ্যতের কর্তব্য নিজের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারেননি। সে জায়গায় নিতে পারলেই কেবল তাঁরা অভ্যুত্থানের ‘প্রহরী’ হয়ে উঠবেন। সামনের দিনগুলোতে সে রকম লাখ লাখ প্রহরী দরকার।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা একা এ কাজ করবেন, নাকি দেশের বৈষম্যের শিকার অন্য সব ‘বঞ্চিত শ্রেণিকে’ তাতে শামিল করবেন, সে সিদ্ধান্তের সময় এখনই। তবে বিগত পাঁচ দশকের বঞ্চিত সমাজকে সর্বোচ্চ সংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত না করে রাষ্ট্র সংস্কার দুরূহ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও