সমাজ না বদলালে রাষ্ট্র বদলাবে না
একটি অভ্যুত্থান ঘটেছিল ১৯৫২-তে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সেটাকে স্তিমিত করে দেওয়ার জন্য ১৯৫৪-তে প্রাদেশিক নির্বাচন দেওয়া হয়। তার রায়টা ছিল পাকিস্তানি অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই। শাসকরা সব সময়ই তৎপর থাকে, চোখ রাখে গণতন্ত্রের পক্ষে কোথায় কোন আন্দোলন হচ্ছে, তাকে দমন করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চুয়ান্ন'র নির্বাচনের পরও তারা সেটাই করেছে। প্রথমে জরুরি অবস্থা এবং পরে সরাসরি সামরিক শাসন জারি করে গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। পরে দেখি অভ্যুত্থান ঘটলো, উনসত্তরে। এবারও সেই একই চেষ্টা, নির্বাচন দিয়ে বিক্ষোভকে প্রশমিত করার উদ্যোগ। কিন্তু রায় তো বের হয়ে এলো স্বাধীনতার পক্ষে।
নির্বাচন হয় কিন্তু তাতে রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন হয় না। যখন আশঙ্কা করা হয় যে রাষ্ট্রের জন্য কোনো বিপদ ঘটবে, তখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনেই এবং প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য যে বর্তমান সময়ে প্রতিষ্ঠান, সেনাবাহিনী, তাকে নিযুক্তি দেওয়া হয় দমনকার্যে। এটা আমাদের দেশে ঘটেছে। অন্য দেশেও ঘটে। বর্তমান সময়ে পাকিস্তানে দুই দলে সংঘর্ষ বাঁধে, সেনাবাহিনী কিছুটা সময় অপেক্ষা করে, তারপর ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচায়। আফ্রিকার কোথাও কোথাও নির্বাচনের পর রীতিমতো গৃহযুদ্ধ বেধে যায়; কিন্তু রাষ্ট্র থাকে এবং রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি করে না। থাইল্যান্ডেও এটা বারবার ঘটেছে। ভবিষ্যতে ঘটবে বলে এখন আশঙ্কা।
এসব পরিবর্তনকে সাধারণত বিপ্লব বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু এগুলো মোটেই বিপ্লব নয়, বিপ্লব মানে হচ্ছে আমূল পরিবর্তন, তেমন কোনো পরিবর্তন শাসনকর্তাদের পোশাক বা নাম বদলিয়ে আসার মধ্য দিয়ে ঘটে না। রাষ্ট্র যেমন ছিল তেমনি থাকে, বরঞ্চ গণতন্ত্রের পক্ষে জনমত প্রবল হতে দেখলে রাষ্ট্র তার স্বৈরাচারী কৌশল ও যন্ত্রপাতিগুলোকে আরও দক্ষ করে তোলে। ব্যক্তিগত নিভৃতি বা গোপনীয়তা বলে কিছু রাখতে চায় না, সর্বত্র গোয়েন্দাগিরী চলে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটতে থাকে, যেমনটা আমাদের দেশে ঘটেছে, ঘটেছে 'আইনসম্মত' ভাবেই।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সংস্কার প্রস্তাব
- সংস্কার
- সংস্কার কাজ