জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবহীন অর্থনীতির স্বরূপ সন্ধান

ঢাকা পোষ্ট ড. এ কে এম মাহমুদুল হক প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:৪৬

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্থিক যে ক্ষতি হচ্ছে তার পরিমাণ নেহায়েত কম নয়। ধারণা করা হয়, প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ১.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে ৩.১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গবেষণায় সম্পদ, স্থাপনা, মানুষের স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতের ক্ষয়ক্ষতির ওপর ভিত্তি করেই এই হিসাব করা হয়েছে।


২০০১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ১৬৩টি দুর্যোগের ওপর ভিত্তি করে সম্পন্ন করা গবেষণায় তুলনামূলকভাবে দরিদ্র দেশগুলো এই ক্ষয়ক্ষতির প্রধান ভুক্তভোগী বলে মনে করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতেই পারে যে, কী হতো যদি বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার না হতো? দেশটির অর্থনীতিতে কি আদৌ কোনো ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হতো? উত্তর খুঁজতে গেলে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের স্বরূপ বুঝতে হবে।


ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয় কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘর মেরামত করতে। উপকূলীয় অঞ্চলে মাথাপিছু ৬৬৮০ টাকা প্রতি বছর একটি পরিবারকে শুধু তাদের বাসস্থান মেরামতের জন্য ব্যয় করতে হয়।


উপকূলীয় অঞ্চলে সাড়ে ছয় হাজার পরিবারের ওপর পরিচালিত এই সমীক্ষায় আরও উঠে এসেছে, পরিবারগুলো এই অর্থ ভিন্ন কোনো উৎস থেকে নয়; বরং তাদের মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকে ঝুঁকিতে ফেলে ব্যবস্থা করে। এই কারণে দারিদ্র্যের দুষ্টু চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া তাদের ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রভাব কেবল তাদের ব্যক্তি পর্যায়েই নয়; বরং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা থেকে মুক্তির পথে একটি অন্তরায় হয়ে রয়েছে।



যে অঞ্চলগুলোয় বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের প্রচলন সবচেয়ে বেশি সে অঞ্চলগুলোর ভৌগোলিক অবস্থান লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এই অঞ্চলসমূহ জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক জেলাগুলো উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যমান। আর তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব সরাসরি গিয়ে এই জেলাগুলোর ওপরে পতিত হচ্ছে। 


এতদঞ্চলের জনগোষ্ঠীদের যেসব কারণে ক্ষুদ্রঋণের ওপর নির্ভর করতে হয় তার মধ্যে অন্যতম জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব। মাথায় রাখতে হবে যে, দুর্যোগে যেসব ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয় সে সবকিছু সংস্কারের জন্যই এই ঋণ গ্রহণ করা হয়। তাই এ থেকে মুনাফা করা বা কোনো অর্থনৈতিক কাজে এই ঋণ কাজে লাগানোর কোনো উপায় থাকে না। এভাবে এসব অঞ্চলে তারা প্রায়শই দারিদ্র্যের কশাঘাতে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই মানুষগুলো নিজেদের সহায়-সম্বল হারিয়ে অর্থনীতিকে সচল রেখে নিজের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে জিডিপিতে অবদান রাখার পরিবর্তে রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।


অন্যদিকে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর তথ্য অনুসারে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা থেকে ৭৮৬ জন লোক চাকরির জন্য ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে, যা আগের বছরে ৪৭৭ জন ছিল এবং এটি স্পষ্টতই দ্রুত বর্ধিষ্ণু তথা মাত্র ২২ মাসের মধ্যে ৬৫ শতাংশ। প্রত্যাবর্তনকারী অভিবাসী কর্মীদের অভিজ্ঞতা ও সাক্ষ্যগুলো প্রকাশ করেছে যে, তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশকে গন্তব্য দেশগুলোয় তাদের আগমনের সময় কাজের অনুমতি দেওয়া হয়নি।


প্রবাসে পাড়ি জমানোর পরে এভাবে প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হয়ে শ্রমিকরা যখন আবার পুনরায় দেশে ফিরে আসে তখন তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে। তখন তাদের কাছে বাংলাদেশের জিডিপিতে অবদান রাখা তো দূরের কথা নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে হিমশিম খেতে হয়। অথচ এই লোকগুলো যদি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের শিকার না হতো তবে হয়তো নিজ নিজ আবাসস্থলে একটি টেকসই উপার্জনের ব্যবস্থা করে তুলতে পারতো।


অর্থনীতিতে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব ছাড়াও আরও নানান পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর সহায়-সম্বল হারিয়ে বড় বড় শহরে পাড়ি জমানো ও ঘনবসতি সৃষ্টি করা। ধারণা করা হয় যে, ২০৫০ সাল অবধি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলবায়ু অভিবাসী সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এই শহরগুলোয় জনসংখ্যা ভয়ানকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে যানজটের মতো আরও নানা সমস্যা সৃষ্টি করে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও