জনগণের আস্থা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের করণীয়

বণিক বার্তা শহীদুল জাহীদ প্রকাশিত: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫১

আধুনিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যপরিধি সীমাহীন নয়। মোটা দাগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছয়টি লক্ষ্য অর্জনের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করে থাকে। লক্ষ্যগুলো যথাক্রমে বেকারত্ব দূরীকরণ ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা, সহনীয় মূল্যস্তর তথা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার স্থিতিশীল রাখা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখা। উল্লিখিত লক্ষ্যগুলো অর্জনের নিমিত্তে বাংলাদেশ ব্যাংক এ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বছরে দুবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে। মুদ্রানীতিপ্রয়োজন বোধে সম্প্রসারণ অথবা সংকোচনশীল হতে পারে। বলে রাখা ভালো, মুদ্রানীতি যে ধরনেরই হোক না কেন তার মুখ্য উদ্দেশ্য আবর্তিত হয় উল্লিখিত ছয়টি লক্ষ্যকে ঘিরেই।


বাংলাদেশের অর্থনীতি এক দুর্দশাগ্রস্ত সময় অতিক্রম করছে। প্রায় সাড়ে ১৫ বছর ধরে চলা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নিয়েছে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গঠিত হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। উপদেষ্টা পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণের পরই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন গভর্নর নিয়োগ হয়। গা ঢাকা দেন আগের গভর্নর। কিছুদিন পর বেশ কয়েকজন ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের পর এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে।


ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশার শেষ নেই। সম্ভবত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক খাত। দুর্নীতির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে বিগত সরকার ব্যাংক লুটে মরিয়া হয়ে ওঠে। ব্যাংক থেকে অর্থ লুট করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, লুটকৃত অর্থ বিদেশে পাচারে তারা নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নেয় এবং নতুন নতুন পদ্ধতি বের করে। কখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট হ্যাক করে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিদেশের ব্যাংকে পাচার করে, কখনো নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের কোষাগার খালি করে আমানতকারীদের পথে বসানোর জোগাড় করে। আমানতকারীদের উদ্ধারে সরকার জনগণের অর্থ ব্যাংকে কখনো মূলধন হিসেবে আবার কখনো তারল্য সহায়তা হিসেবে সরবরাহ করে।



এ ধরনের বিরূপ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়েই বিদ্যমান ব্যাংক ব্যবস্থা সংস্কারের সংকল্প ব্যক্ত করেন, যা জনমনে আশার আলো সঞ্চার করে। সঠিকভাবেই বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্দশাগ্রস্ত তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করে। দুর্দশাগ্রস্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া উন্মুক্ত না হলেও যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো আসলেই সমস্যা জর্জরিত। এ কথা বলার কারণ হলো চিহ্নিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোই যে শুধু দুর্দশাগ্রস্ত তা অনেকেই বিশ্বাস করে না। অনেকে মনে করে, এসবের বাইরে থাকা আরো কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক সমস্যা জর্জরিত থাকতে পারে। কারণ তাদের অনেকেরই বর্তমান ব্যাংকিং কার্যক্রমের মান স্বাভাবিক নয়।


বাংলাদেশ ব্যাংক যে কয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে তাদের অধিকাংশই ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংক। এ দেশে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম বেশ জনপ্রিয়। দেশের উল্লেখযোগ্য মানুষ ইসলামী ব্যাংকিং করতে ভালোবাসেন হয় ইসলামী শরিয়াহ বিশ্বাসের কারণে অথবা ইসলামী ব্যাংকের প্রতি তুলনামূলক বেশি আস্থার কারণে। সে কারণেই অনেক প্রচলিত ধারার বাণিজ্যিক ব্যাংকও ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রচলন করে, ইসলামী ব্যাংকিং শাখা অথবা উইন্ডো ব্যবস্থাপনা করে। অনেক উদ্যোক্তা ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত ইসলামী ব্যাংকের লাইসেন্স গ্রহণ করে। ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশকিছু সুবিধা প্রদান করে। তুলনামূলক কম নগদ সঞ্চিতি রক্ষা অন্যতম সুবিধা হিসেবে পরিগণিত। উদাহরণস্বরূপ বর্তমানে প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য প্রযোজ্য বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি যেখানে ১৭ শতাংশ সেখানে ইসলামী ব্যাংকের জন্য তা মাত্র ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংক ১০০ টাকা নতুন আমানত পেলে তা থেকে ১৭ টাকা বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি রেখে সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা ঋণদান করতে পারবে। এ ৮৩ টাকা ঋণ দিয়ে ১০ শতাংশ হারে সুদ পাবে বছর শেষে ৮ টাকা ৩০ পয়সা। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংক সমপরিমাণ তথা ১০০ টাকা আমানত গ্রহণ করে বিনিয়োগ করতে পারবে সর্বোচ্চ ৯০ দশমিক ৫ টাকা। ১০ শতাংশ লাভে তাদের আয় দাঁড়াবে বছরান্তে ৯ টাকা ৫ পয়সা। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের তুলনায় বেশি মুনাফাজনক। তুলনামূলক লাভজনক হওয়ার কারণে অনেক উদ্যোক্তা ইসলামী ব্যাংকিংয়ে আগ্রহী হন। কিন্তু অসৎ মালিক পক্ষ শুধু অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনেই থেমে থাকেনি। ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে যোগসাজশে তারা ব্যাংক লুট করতে থাকেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম কাজ ছিল তাদের বারণ করা, বিরত রাখা অথবা ক্ষেত্রবিশেষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নিবন্ধের শুরুতেই যে কথা বলা—নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম কাজ ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেখভাল, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে ব্যবসায়িক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা। যে কাজে বাংলাদেশ ব্যাংক নিতান্তই ব্যর্থ হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও