নিষিদ্ধ পলিথিন কি আবারও নিষিদ্ধ হবে?
বাংলাদেশে পলিথিন কি নিষিদ্ধ? উত্তর দেওয়ার আগে ভাবুন। আসলেই কি বাংলাদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ? অন্তত বাজারে গেলে পলিথিন নিষিদ্ধের বিষয়টা নজরে আসে না। ২০০৩ সালে যাদের জন্ম, তাদের কাছে পলিথিন নিষিদ্ধের বিষয়টা একদমই অজানা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের অনেকেরই জন্ম ২০০৩ সাল বা তারপরে। তাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, বাংলাদেশে কি পলিথিন নিষিদ্ধ? তাদের উত্তর হবে, না। অর্থাৎ তারা জানে না, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর বিধান অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০২ সালের ১ মার্চ সরকার বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
পৃথিবীতে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যারা আইন করে পলিথিন নিষিদ্ধ করেছে। তাহলে পলিথিনের ব্যবহার এত বেশি কেন? কীভাবে ব্যবহার বেড়েছে? কারা এর পেছনে কাজ করছে? এর উত্তর আমরা জানব। তার আগে জানা জরুরি হঠাৎ পলিথিন নিয়ে এত আলোচনা কেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে কোনো ধরনের পলিথিন বা পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ রাখা যাবে না এবং ক্রেতাদের দেওয়া যাবে না। বিকল্প হিসেবে সব সুপারশপে বা শপের সামনে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ক্রেতাদের জন্য রাখা হবে। (দ্য ডেইলি স্টার বাংলা, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪)
এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এই ধরনের বক্তব্য শুনতেও ভালোই লাগে। কিন্তু তা কি বাস্তবায়ন সম্ভব? সংশয়! কারণ এতদিনের পুরোনো জট ছুটবে কীভাবে? যদি অন্তর্বর্তী সরকার কোনো এক জাদুবলে অসাধ্য সাধন করে ফেলে, পরবর্তীতে রাজনৈতিক সরকার কি তা মানবে?
উৎপাদন নিষিদ্ধ হলেও প্রায় তিন হাজার কারখানায় দৈনিক এক কোটি ৪০ লাখ পলিথিন উৎপাদিত হচ্ছে। (প্রথম আলো, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪)
এক কোটি ৪০ লাখ পলিথিনের অর্থনীতি বিশাল। এর ভাগীদারও বিশাল। ভোক্তাও বিশাল। এরা সহজে এই অর্থনীতি বন্ধ হতে দেবে কি? বরং পলিথিনের ওপর যেন পাঁচ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়, তার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
সব ধরনের পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিক ব্যাগ ও মোড়ক সামগ্রীর ওপর পাঁচ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ন্যাচার কনজারভেশন অ্যালায়েন্স (বিএনসিএ)। (টিবিএস, ১৪ জুন ২০২২)
এই হচ্ছে বাস্তব চিত্র। এই বাস্তবতা হটিয়ে যখন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে কোনো ধরনের পলিথিন বা পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ রাখা যাবে না এবং ক্রেতাদের দেওয়া যাবে না, তখন আসলে আশা খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সেই আশার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে সংশয়! হবে তো?
পলিথিন নিষিদ্ধ হয়েছিল ২০০২ সালে। তখন ছিল বিএনপি-জামায়াতের শাসনামল, এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এরপর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ শাসন করেছে। ২০০২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত পলিথিন নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও কেন কোনো রাজনৈতিক সরকার তা বন্ধ করতে পারেনি? এই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে। প্রশ্নের উত্তর সময় বলে দেবে। আমরা ফিরি ২০০২ সালে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- নিষিদ্ধ
- পলিথিন
- উৎপাদন বন্ধ