আইনের শাসন চাইলে ‘মব জাস্টিস’ বন্ধ করতে হবে
গত কয়েক দিনে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা আমাদের গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ছিলেন মানসিক রোগী। অভিযোগ, তিনি চুরি করতে সেখানে গিয়েছিলেন। কেউ চুরি করতে এলে তাঁকে পিটিয়ে মারতে হবে?
অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। নিহত ছাত্রের নাম শামীম আহমেদ। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। অভিযোগ, শামীম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন। কেউ আন্দোলনের বিরোধিতা করলে তাঁকে মেরে ফেলতে হবে? তিনি অপরাধ করলে শিক্ষার্থীরা কেন তাঁকে আইনের হাতে সোপর্দ করলেন না?
এগুলো মব জাস্টিস ছাড়া কিছু নয়। কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই ঘটনা নয়, আরও অনেকে মব জাস্টিসের শিকার হয়েছেন। দেশে আইনের শাসন থাকলে এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটতে পারত না।
ক্যাম্পাসে ছাত্র ও যুব হত্যার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি যে অবস্থানে আছেন, তাতে দুঃখ প্রকাশ করাই যথেষ্ট নয়।
দুঃখ প্রকাশ তো আমরা সাধারণ নাগরিকেরা করব। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তথা সরকারের দায়িত্ব হলো এ ধরনের মব জাস্টিস থেকে মানুষকে রক্ষা করা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। প্রশ্ন হলো, যাঁরা আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? সরকার যদি এসব মব জাস্টিসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে না পারে, তাহলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে কীভাবে?
আগের সরকারের আমলে একধরনের মব জাস্টিস ছিল, বর্তমান সরকারের আমলে আরেক ধরনের মব জাস্টিস চলছে। এটা কোনোভাবে চলতে পারে না। মব জাস্টিস খোদ আদালত প্রাঙ্গণেও হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মাজার, দরবার, খানকায় হামলা হচ্ছে। আর এসব হামলার বিরুদ্ধে সরকার নির্দেশ দিয়েই চুপচাপ বসে আছে।
মাঠপর্যায়ে ডিসি, এসপি ও ইউএনওরা যদি হামলা ও লুটপাট বন্ধ করতে না পারেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ বিষয়ে যে কঠোর বার্তাটি দিয়েছেন, আমি মনে করি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অনুরূপ বার্তা দেওয়া উচিত। রিজওয়ানা বলেছেন, ‘আমি অন্য কিছু দেখব না। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু ঘটলে ডিসি–এসপিদের কাছে কৈফিয়ত চাইব।’
অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স দেড় মাস হতে চলল। দু–একটি ক্ষেত্র ছাড়া আমরা কোথাও সরকারের তেমন সক্রিয়তা দেখি না। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। এর আগে ঠাট্টা করে বলেছিলাম, এই সরকারের আমলে দুর্নীতিও হচ্ছে না, আইনশৃঙ্খলারও কোনো উন্নতি নেই!
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান দুটি মাধ্যম হলো বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিচার বিভাগ, বিশেষ করে নিম্ন আদালত আগের মতোই আছে। জেলায় জেলায় আইনজীবীদের পদত্যাগের জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলার আইনজীবী সমিতির নেতারা এসে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন, তাঁদের সমিতির সভাপতি বিএনপির ও সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ–সমর্থক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু একদল বহিরাগত এসে বলছেন, সমিতি ভেঙে দিতে হবে। আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু গঠনতন্ত্রে তো আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সুযোগ নেই। এই বহিরাগতরা আসলে তাঁদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চেয়েছেন। এঁরা কারা? সরকার ধরছে না কেন?
- ট্যাগ:
- মতামত
- আইনের শাসন
- মব জাস্টিস