বিপ্লবের বীজধান, তোরে মনে পড়ে ভাই!

সমকাল ফারুক ওয়াসিফ প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৭

বাংলাদেশের মাটি উর্বর। কারণ শত শত বছর ধরে এখানে বারবার গণহত্যা হয়েছে। দুর্ভিক্ষেও মারা গেছে কোটি কোটি লোক। সেইসব অগণিত লাশ মাটিতে মিশে গিয়ে মাতৃভূমির বুকে নাইট্রোজেনের জোগান বাড়িয়ে গেছে। নেপোলিয়নীয় যুদ্ধে ইউরোপের বিভিন্ন ময়দানে হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। পরে দেখা গেছে, ওইসব যুদ্ধের মাঠের মাটি ব্যাপক উর্বর। কী মর্মান্তিক এ উর্বরতা!


এই দেশে জীবিত মানুষ গুম হয়েছে। এই দেশে নাম-ঠিকানা-ওয়ারিশঅলা মানুষেরা গণকবরে গুম হয়ে আছে। তাহলে কী বদলালাম আমরা? একাত্তরে ভ্যানের ওপর স্তূপ করা লাশ আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে শুনিনি। কিন্তু ২০২৪-এর দীর্ঘ জুলাইয়ে সেই ভয়াবহতা ঘটেছে। একাত্তরেও গণকবরে চাপা দিয়ে বেওয়ারিশ করে দেওয়া হয়েছিল অনেক মানুষকে। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের বাঁচাতে পারিনি; কিন্তু বেওয়ারিশ করে দেওয়া তো ঠেকাতে পারি এখনও। এখনও লাশগুলো তুলে ডিএনএ টেস্ট করে পরিবারের হাতে ফিরিয়ে দিতে পারি। যাতে একটা কবর হয়, যাতে তাদের মা-বাবা-ভাই-বোন কবরটার পাশে বসে বুকের খাঁ খাঁ শূন্যতা শোক দিয়ে হলেও ভরাতে পারে। না হলে আমৃত্যু বুকের ভেতর শহীদ স্বজনের কবর বয়ে বেড়াতে হবে। সে বড় দুঃসহ। অন্যরা হয়তো মানে, কিন্তু যার যায় সে-ই শুধু জানে।


আমরা তো মুক্ত হয়েছি। আমরা তো আর স্বজনের লাশ শনাক্ত করতে ভয় পাব না। তাহলে কেন পত্রিকার শিরোনাম হয় ‘পরিচয়হীন ১০৪ অভাগা!’ এই সংখ্যা আসলে কত, তা-ও জানার সুযোগ দিনকে দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সরকারকে অনেক দিক সামলাতে হচ্ছে। ঘরের শত্রু বিভীষণ, জাতির শত্রু মীর জাফরদের ছল ও ছুতার কারবার খেয়াল রাখতে হচ্ছে। কিন্তু যদি বেওয়ারিশদের স্মৃতির ওয়ারিশান আমরা না হই, তাহলে বিবেকের কাছে কী জবাব দেব? কী শপথ তাহলে আমরা করলাম, যদি এখনও আন্দোলনে গুলি খাওয়া স্বামীর চিকিৎসার টাকা জোগাতে সন্তানকে বিক্রি করে দিতে হয় কোনো মাকে– দেশের মুখ ছোটো হয়ে যায় না? লাখো ছাত্রছাত্রীর মধ্যে অনেকেই এখনও হাসপাতালে, অনেকে পঙ্গু। দৃষ্টি হারিয়েছে চারশতেরও বেশি মানুষ। ১৮ হাজার আহত মানুষের বেশির অংশটাই তো শ্রমজীবী। 



এবং এই আন্দোলন কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক ছিল না। রংপুরের গ্রামের ছেলে আবু সাঈদের মৃত্যু যেভাবে সারাদেশকে জাগিয়ে দিয়েছিল, আর কোনো মফস্বলি প্রতিরোধ এভাবে জাতির হৃদয়ের মণিকোঠাকে নাড়িয়ে দিতে পেরেছিল কি? সারাদেশের রিকশাচালকেরা যেভাবে সহযোগী বাহিনী হয়ে উঠেছিল, সেটা কি বিদ্রোহী ব্যাকরণের শক্তিধর এক সূত্র আমাদের হাতে ধরিয়ে দেয় না?


এই দেশের রিকশাচালক থেকে শ্রমিক-কৃষকেরা অদ্ভুত এক প্রজাতির মানুষ। নিজের ছেলেমেয়েকে পড়াতে পারছেন কিনা তার ঠিক নাই, অথচ ছাত্রদের বুকে গুলি লাগলে তারা সহ্য করতে পারেন না। দীনহীন রোগাভোগা মানুষদের মধ্যে তখন যেন ঘুমন্ত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার জেগে ওঠে। তারা তখন প্রতিশোধ নেন। ১৯৫২ থেকে ২০২৪ এটাই দেখেছি আমরা। ২০০৬ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কয়লা খনিবিরোধী আন্দোলনে ৩ কিশোর নিহত হয়েছিল। নিজের চোখে দেখেছি সেই দৃশ্য। একটা কৃষক জনপদ, একটা ধানের রাজধানী কী যে বিপুল তেজস্ক্রিয় আবেগে বিস্ফোরিত হয়েছিল! বেশ কিছুদিন প্রশাসন ওই এলাকায় ঢুকবার সাহস পায়নি। আর এখন আনুমানিক ১৬শ মানুষকে হত্যা করা হলো– হয়তো আরও গায়েব করা লাশের শুমার করা বাকি আছে– বাংলাদেশ ফেটে পড়ল। তারপরও সব আহত চিকিৎসা পেল না, সব বেওয়ারিশ যথাযোগ্য জানাজা ও সৎকার পেল না, পেল না কবর কিংবা দাহ হওয়ার সুযোগ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও