জুলাই অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের আসন্ন রাজনৈতিক জটিলতা
কোথায়, কেমন সংস্কার হতে পারে?
সরকারপদ্ধতি কী হবে? সংসদীয় পদ্ধতিই থাকবে, নাকি রাষ্ট্রপতিশাসিত হবে। কিংবা উভয় ব্যবস্থার মধ্যে একটি ভারসাম্য আনা হবে? এক কক্ষবিশিষ্ট না দ্বি কক্ষবিশিষ্ট সংসদ হবে? ভোটের পদ্ধতি কী হবে, এফপিটিপি না সংখ্যানুপাতিক? রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও সরাসরি ভোটে হবে কি না? মোটকথা নির্বাচনী ব্যবস্থা ও সাংবিধানিক কাঠামোয় কী ধরনের সংস্কার-পরিবর্তন ঘটবে, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুর হিসাব।
সংবিধান পরিবর্তনের আলাপ শুরু হয়েছে। সংবিধানের কী ধরনের পরিবর্তন হবে, তার ওপরও নির্ভর করছে ভোট ও জোটের হিসাব। রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কী ধরনের সংস্কার হবে, কী ধরনের বাধ্যবাধকতা থাকবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই সংস্কার করবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর অধিক আগ্রহ নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকেন্দ্রিক বিষয় নিয়ে। কী ধরনের সংস্কার হবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ধারণা থেকে বলা, তা সাধারণ বা জোড়াতালির কোনো বিষয় ঘটবে না। প্রার্থীর যোগ্যতার শর্ত, মনোনয়নপদ্ধতি, ভোট প্রদানের ধারায় বাধ্যবাধকতা নির্বাচনের চেহারা অতীতের মতো না-ও থাকতে পারে।
কত দিন থাকবে ছাত্রদের এই ঐক্য ও শক্তি?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা বলছে কিন্তু ছাত্রদল, শিবিরসহ অন্য সংগঠনগুলো যদি এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে দাঁড়ায় তাহলে কী হবে? এখন না হয় তারা পরিস্থিতির কারণে নীরব, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তনে তারা সুযোগ নেবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এটা কোনো আদর্শ বা কর্মসূচিভিত্তিক সংগঠনও নয়। তাদের কোনো একক নেতৃত্বও নেই, অভিভাবক সংগঠনও নেই। এদের মধ্যে কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী সুবিধাভোগী হবে, অন্যরা কি দীর্ঘ মেয়াদে তাকে সহজভাবে নেবে? একটা ইস্যুতে তারা একত্র হয়েছিল, তাদের আবেদনের অধিক পূরণ হয়েছে, এখন তারা সমন্বয়কদের নির্দেশ-আহ্বান মানবে কেন? বিভিন্ন স্থানে সিক্সটিন্থ ডিভিশনের মতো ৫ আগস্টের পর কমিটি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠিত ছাত্রসংগঠনগুলোর দেশজুড়ে একটা সাংগঠনিক কাঠামো, শক্তি ও শৃঙ্খলা (?) আছে। বৈষম্যবিরোধীদের সে অবস্থা ভাসা ভাসা, সেটা কত দিন টিকবে সে প্রশ্ন সংগত। সমাজে যে শক্তিগুলো তাদের সাহস-ইন্ধন জুগিয়েছে, তারা সেটা কত দিন করবে তা নির্ভর করছে আসন্ন রাজনীতির সমীকরণের ওপর। বিএনপি নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরলে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, সেটা তাদের জন্য স্বস্তিকর না-ও হতে পারে। পরিস্থিতি তেমন হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে অন্যান্য ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর অবস্থা ছাত্ররাজনীতির প্রশ্নে মুখোমুখি হতে পারে।
ছাত্রদের পুলিশি দায়িত্ব কি দ্বন্দ্ব-সংঘাত বাড়াবে না?
২৫ আগস্ট আনসার বাহিনী সচিবালয়ে তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করতে যায়। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশ ব্যর্থ হলে ছাত্রদের ডাকা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রদের সচিবালয়ে এনে আনসারদের ধাওয়া করে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে গেলে আনসারদের সঙ্গে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ছাত্রদের পেশাজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেটা কি ভালো হচ্ছে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এইভাবে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত তৈরি হলে ছাত্র-জনতার বিভেদ বাড়বে। সেটা হলে অন্তর্বর্তী সরকার বিতর্কিত হবে, তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমবে।