রেমিট্যান্সে সরকারি প্রণোদনার বৈষম্য এক্ষুনি বন্ধ হোক!
গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে এটা আমার প্রথম লেখা। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ এমন দিন এসেছে, তাদের প্রতি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এবং সেইসব আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
নিজের জীবনকে অন্যের জন্য বিলিয়ে দেওয়া থেকে বড় কাজ এই পৃথিবীতে আর নেই। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত থাকে দেশের সেনাবাহিনী। সেই জন্য তাদের পেশা অন্যান্য পেশা থেকে বেশি মর্যাদার। তারা জীবন বাজি রেখে কাজ করে। কিন্তু যাদের চাকরি নেই, সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী; তারা যখন দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দেয়, তা আরও বেশি সম্মানের, আরও বেশি ত্যাগের, আরও বেশি মহিমার। আশা করছি, যে মহান উদ্দেশ্য নিয়ে তারা এই জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হবে।
২. রেমিট্যান্সে বৈষম্য
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল ধারণাই ছিল সমাজের নানান স্তরের বৈষম্য দূর করা। চাকরির কোটা আন্দোলন থেকে সেটা এখন সমাজের নানান অসংগতি দূর করার প্ল্যাটফর্ম হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই আজ একটি অসংগতি নিয়েই লিখছি, যা দ্রুত সমাধান করতে হবে।
অনেকে জানেন, রেমিট্যান্স নিয়ে বাংলাদেশে এক ধরনের বৈষম্য রয়েছে। সরকার রেমিট্যান্সের ওপর ২.৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে বসে যেসব তরুণ ফ্রিল্যান্সিং করে ডলার আয় করেন, তারা সেটা পান না। তাই তাদের ভেতর ক্ষোভ রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন, ডলার তো ডলারই। এখানে আবার দুই ভাগ কেন?
আমরা জানি, ডলারের রকমফের আছে। কোন ডলারটা রেমিট্যান্স? যখন একজন বাংলাদেশি প্রবাসে গিয়ে ওখানে সশরীরে থেকে কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন এবং সেই ডলার যখন দেশে পাঠান, সেটা হলো রেমিট্যান্স। সরকার এর ওপর প্রণোদনা দিচ্ছে। ধরুন, একজন নিউইয়র্কে থাকেন। তিনি পরিবারের জন্য বাংলাদেশে ডলার পাঠান। এটা হলো রেমিট্যান্স। এখানে মূল বিষয়টি হলো, ব্যক্তিকে ওই দেশে প্রবাসী হতে হবে।
আর ফ্রিল্যান্সিং হলো, আপনি বাংলাদেশে বসেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করছেন। সেই প্রতিষ্ঠান আপনাকে ডলারে পেমেন্ট করছে, যা আপনি বাংলাদেশে বসেই ব্যাংকে বুঝে নিচ্ছেন। কিন্তু এই টাকাটা রেমিট্যান্স নয়! এটার জন্য সরকারের ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা নেই।
দুটোই তো বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন। তাহলে ফ্রিল্যান্সিং করে যারা আয় করেন, তাদের প্রণোদনা নেই কেন?
৩. প্রণোদনা দেয় কে?
এই যে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা, এটা কিন্তু কোনো ব্যাংক দেয় না। এটা দেয় বাংলাদেশ সরকার। সব ব্যাংককে এই নিয়মেই চলতে হয়। কিন্তু এটা ঘিরে রয়েছে বিশাল এক দুর্নীতি। ব্যাংকগুলো বেশির ভাগ লেনদেন প্রবাসীদের নামে চালিয়ে দেয় এবং সরকারি কোষাগার থেকে বাড়তি ২.৫ শতাংশ টাকা তুলে নেয়। ব্যাংকগুলো এই চালাকিটা করছে কিনা, তা দেখার জন্য মনিটরিং সিস্টেম আছে। তবে কখনও শোনা যায়নি, এই অনিয়মের জন্য কাউকে কখনও জরিমানা করা হয়েছে। আমার কাছে ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে, যারা এমন অবৈধভাবে অনেক ডলার রেমিট্যান্স হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে। সরকারের বিশাল অঙ্কের টাকা বের করে নিচ্ছে।
সরকার যদি ভালো করে পুরোনো ডেটাগুলো অডিট করে দেখে, তাহলেই বুঝতে পারবে, প্রতি মাসে কত মিলিয়ন ডলার এভাবে ভুল খাত দেখিয়ে বের করে নেওয়া হচ্ছে। এগুলো এই দেশের মানুষের টাকা।
৪. প্রণোদনা এক্ষুনি বন্ধ করুন
এই সরকার যেহেতু প্রাথমিকভাবেই ব্যাংকিং সেক্টরে হাত দিয়েছে, তাদের উচিত হবে দ্রুত এই প্রণোদনাটি বন্ধ করে দেওয়া। যারা প্রণোদনার পক্ষে কথা বলেন, তাদের যুক্তি– এটা দিয়ে হুন্ডি ঠেকানো যায়। মগের মুল্লুক আর কাকে বলে! এ দিয়ে যদি হুন্ডি ঠেকানো যেত, তাহলে তো বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন ডলার বাইরে চলে যেত না।
এগুলো হলো বিশেষ কিছু মানুষকে দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেওয়া। যদি প্রণোদনা দিতেই হয়, তাহলে সবার জন্য দিন। যেহেতু সবাইকে দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। তাহলে দেশের টাকা খরচ করে কেন এমন একটি বৈষম্যমূলক পদ্ধতি এখনও চালু রাখা হয়েছে?
প্রবাসীদের যদি দেশে টাকা পাঠাতে হয়, তাহলে সে দেশের ডলারের রেট মেনে নিয়েই পাঠাবে। কিন্তু বিশেষ কিছু গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। আশা করি, এই বৈষম্য এ মাসের মধ্যেই দূর হবে। এতে দেশের টাকা বাঁচবে, অর্থনীতির ওপর কিছুটা হলেও চাপ কমবে। আমাদের ছেলেমেয়ে তো এই বৈষম্যের জন্য জীবন দেয়নি, তাই না?